07/11/2022
🌺বিয়ের গুরুত্ব ও ফজিলত
বিয়ে পারিবারিক জীবনের প্রথম শর্ত। নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈধ সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ইসলাম ব্যবস্থা করেছে বিয়ের। নৈতিকতার উৎকর্ষতা সাধন ও সামাজিক সুশৃঙ্খলতা আনার জন্য বিয়েকে কুরআন ও হাদিসে সার্বিকভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে।
💠আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:
❝তারা (স্ত্রীগণ) তোমাদের পোশাক এবং তোমরা (স্বামীগণ) তাদের পোশাকস্বরূপ।❞[সূরা বাকারা : আয়াত ১৮৭]
💠সুশৃংখল ও প্রশান্তির জীবন লাভ:
❝আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি লাভ করতে পারো এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।❞[সূরা রুম : আয়াত ২১]
💠আল্লাহ সচ্ছলতা দান করবেন:
❝তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। যারা বিবাহে সামর্থ নয়, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেন।❞[সূরা নূর : আয়াত ৩২-৩৩]
💠আল্লাহর রাসুল [সা.] বলেন:
❝হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মাঝে যারা বিয়ে করতে সক্ষম তারা যেন বিয়ে করে নেয়। কেননা বিয়ে দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং যৌন জীবনকে সংযমী করে। আর যে বিয়ে করতে সক্ষম নয় সে যেন রোযা রাখে। কেননা রোযা তার যৌনস্পৃহা দমিত করবে।❞[বুখারী:২/৭৫৮, মুসলিম:১/৪৪৯, ইবনে মাজা:১৩২]
💠আল্লাহ তাআলা অবশ্যই সাহায্য করবেন:
রাসূলুল্লাহ [সা.] ইরশাদ করেন, ❝তিন শ্রেণীর লোককে আল্লাহ অবশ্যই সাহায্য করবেন-১. স্বাধীন হওয়ার চুক্তিতে আবদ্ধ গোলাম, যে নিজ মুক্তিপণ আদায়ের ইচ্ছা রাখে, ২. চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষার উদ্দেশ্যে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ব্যক্তি, ৩. আল্লাহর পথে জিহাদকারী।❞[তিরমিযী:২/২৯৫;৪; নাসায়ী:২/৫৮; ইবনে মাজা;১৮১]
💠আল্লাহ তাআলা আরো বলেন:
❝হে মানবমন্ডলী! তোমরা তোমাদের রাব্বকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে একই ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তা হতে তদীয় সহধর্মিনী সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের উভয় হতে বহু নর ও নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন।❞[সূরা নিসা: ০১]
💠❝তিনিই পানি দ্বারা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর তাকে বংশগত ও বৈবাহিক আত্মীয়তা দান করেছেন। তোমার প্রতিপালক সর্বশক্তিমান।❞[সূরা ফুরকান: ৫৪]
💠আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন:
❝আল্লাহর সেই ফিতরত অনুযায়ী চলো, যে ফিতরতের ওপর তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টিতে কোনো পরিবর্তন সাধন সম্ভব নয়।❞[সুরা রুম: ৩০]
🔳বিয়ে আম্বিয়ায়ে কেরামের সুন্নত:
💠❝আপনার পূর্বে প্রেরণ করেছি অনেক রাসুল এবং তাদেরকে দিয়েছি স্ত্রী ও সন্তান-সন্তুতি।❞[সূরা রাদ: ৩৮]
💠আবু আইয়ুব [রা.] এর বর্ণনায় এসেছে মহানবী [সা.] বলেছেন- ❝নবী-রসূলগণের চারটি সুন্নত রয়েছে। সেগুলো হলো ১. লজ্জাবোধ, ২. সুগন্ধি ব্যবহার, ৩. মিসওয়াক করা, ৪. বিয়ে করা।❞[তিরমিযী:১/১২৮]
💠নবী কারিম [সা.] বলেন, ❝মানুষের কি হলো? তারা এমন এমন কথা বলে। কিন্তু আমি নামাজ পড়ি এবং ঘুমাই, নফল রোজা রাখি, আবার কখনও রাখি না। আবার বিয়ে-শাদিও করি। অতএব যে ব্যক্তি আমার সুন্নত হতে মুখ ফিরিয়ে নিবে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।❞[সহিহ মুসলিম: ১৪০১]
💠রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,❝বিয়ে হলো আমার সুন্নাত যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত তরিকা ছেড়ে চলবে সে আমার দলভুক্ত নয়।❞[বুখারি: ৫০৬৩]
💠❝তোমরা অধিক সন্তান প্রসবকারী স্ত্রীলোককে বিয়ে করো এবং বংশ বৃদ্ধি করো। কেননা, কিয়ামতের দিন তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে আমি অন্যান্য উম্মতের ওপর গর্ব করবো।❞[আবু দাউদ: ২০৫০]
💠আবু হুরাইরাহ [রা.] কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল [সা.] বলেছেন, ❝চারটি গুণ দেখে নারীকে বিবাহ করা হয়; তার ধন-সম্পদ, তার বংশ মর্যাদা, তার রূপ-সৌন্দর্য এবং তার দ্বীন-ধর্ম দেখে। তুমি দ্বীনদার পাত্রী লাভ করে সফলকাম হও।❞[বুখারি ৫০৯০,মুসলিম ১৪৬৬,আবু দাউদ ২০৪৭]
🔳বিয়েকে সহজ করা ও ফিতনার পথ বন্ধ করা:
💠হজরত আয়েশা [রা.] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ❝রাসুল [সা.] বলেছেন, স্বল্প খরচের বিয়ে সর্বাপেক্ষা বরকতময়।❞[বায়হাকি ফি শুআবিল ঈমান: ৬৫৬৬]
💠নবী আকরাম [সা.] এ ব্যাপারে আরও বলেন, ❝দ্বীনদারি ও চারিত্রিক দিক বিবেচনায় তোমাদের পছন্দ হয়, এমন ব্যক্তি তোমাদের নিকট বিয়ের প্রস্তাব দিলে (উপযুক্ত পাত্রীকে) তার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দাও। যদি বিয়ে না দাও, তাহলে সমাজে বিরাট ফেতনা ও ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দেবে।❞[সুনানে তিরমিজি ১/২০৭]
💠দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ করা:
আনাস [রা.] বলেন, মহানবী [সা.] ইরশাদ করেছেন,❝কোন ব্যক্তি যখন বিয়ে করল তখন সে যেন দ্বীনের অর্ধেকটা পূর্ণ করে ফেলল। এখন সে যেন বাকি অর্ধাংশের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে।❞[মিশকাত:২/২৬৮]
💠রাসুলে আকরাম [সা.] ইরশাদ করেন:
❝তোমরা বিয়ে করো। কেননা বিয়ে এক হাজার বৎসরের নফল ইবাদত অপেক্ষা উত্তম।❞[তাবরানী ৬/৫]
💠পূত-পবিত্র অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ:
আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন,❝মহানবী [সা.] ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি পূত-পবিত্র অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করতে চায় সে যেন, বিয়ে করে স্বাধীন নারীকে।❞[ইবনে মাজাহ:১৩৫ ]
💠পিতা-মাতার দায়িত্ব:
রাসূল [সা.] বলেছেন, ❝সন্তান জন্মগ্রহণের পর পিতা-মাতার দায়িত্ব হল তার সুন্দর নাম রাখা এবং দীন শিক্ষা দেয়া, আর প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গেলে বিবাহ করিয়ে দেয়া। যদি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও বিবাহ না করায়, আর সন্তান কোন গুনাহে লিপ্ত হয়, তাহলে এর দায়ভার পিতার উপরই বর্তাবে।❞ [বায়হাকী: ৮২৯৯]
সর্বোপরি, রাষ্ট্র ও সমাজকে যৌন অনাচার থেকে রক্ষা করতে হলে, যিনার পথ বন্ধ করতে হলে অবশ্যই বিয়েকে করতে হবে সহজ ও স্বাভাবিক। আর প্রত্যেক মা-বাবার উচিত অতি তাড়াতাড়ি তাদের উপযুক্ত ছেলেমেয়েকে বিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা। আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে গুনাহমুক্ত পবিত্র দাম্পত্য জীবন গড়ে তোলার তাওফিক দান করুন। আমিন।