20/07/2020
প্রিয় হেমন্ত,
সেদিন যখন তুমি চলে গেলে, আমার তখন বলার কিছু ছিল না, সত্যই মুখে কোন ভাষা সেদিন ছিলনা। শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলাম, তুমি চলে গেলে দিগন্ত বরাবর ক্রমশ বিস্মৃতির আড়ালে। আমার চোখের জলে ঝাপসা হয়ে এলো তোমার বিদায়ী পদচিহ্ন। সেই পদচিহ্ন মুছে ফেলতে চিয়েছি বারংবার, অথচ সেই চিহ্ন গাঢ়ো থেকে গাঢ়তর হয়েছে দিনের পর দিন, মাথার সিঁথির মত। তোমাকে ঘিরে আমার সমস্ত স্মৃতি, অতীত ভালবাসা সব কিছুই যেনো অমোচনীয় কালির মত স্মৃতিপটে লেপ্টে আছে। মাথার সিঁদুর হয়তো মুছে গেছে, কিন্তু সিঁথি রয়ে গেছে দাগ কাঁটা ঘায়ের মত। ভেবে আশ্চর্য্য হই, আমাদের স্মৃতিময় সব হাঁসি আনন্দ, সুখ সব কিছু কেঁড়ে নিয়ে চলে গেলে, অথচ নিজেরই অজান্তে শুধু স্মৃতিটুকু গেলে ফেলে। আজও সেই প্রশ্নের উত্তর পাইনি, রয়ে গেছে অজানা, শুধু স্মৃতিটুকুই কেন শেষ সম্বলের মত বেঁচে থাকার অবলম্বন হয়ে রইল।
এখন আমার অফুরান্ত সময়। জীবনের এই পর্যায়ে এসে একবার হিসেব নিকেষ করে নেবার দরকার। যা কিছু পেয়েছি আর যা কিছু হারিয়েছি। যে স্রোতে একদিন সমুদ্রের উত্তাল আহ্বানে, ভেসে গিয়েছিলাম মোহনার পানে, সেই স্রোত ছিল উজান পানে, আজ তার ফিরতি পথ ভাটির টানে। তাই খানিকটা পিছু ফিরে তাকানো। কি ছিল সেই জীবনে আর কি ছিল না সেই সময়ে। সময় নিজে কথা বলে অজান্তেই, তা আমরা শুনতে চাই কিংবা না চাই। কখনো সে কথা বলে ফিসফিস করে, কখনো গুনগুনিয়ে, কখনোবা নদীর স্রোতের মত কলকলিয়ে অবিরত। সময়ের কথা অতীত হয়ে তা কেবলই স্মৃতি কথা হয়ে পড়ে থাকে।
একদিন অবুঝের মত, আমারই অজান্তে হৃদয়ের প্রান্তে তোমার মুর্তি গড়েছিলাম, তোমাকে বসিয়েছিলাম দেবতার আসনে। যেদিন প্রথম গানের আসরে আমাকে মঞ্চে ডেকে নিয়েছিলে, আমার কাঁপা কাঁপা আর ভীরু কন্ঠের সাথে সেদিন তুমি সেতারে সঙ্গত করেছিলে। আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম সুরে মুর্চ্ছনায়, আর সেই সাথে হারিয়েছিলাম তোমাতে। সেই আমার সর্বনাশ, অথচ তুমি বলেছিলে এতো প্রেমের বারোমাস। সেই থেকে সুরে সুরে বাধলাম স্বপ্ন, স্বরলিপির প্রচ্ছন্নতায় আমাদের প্রেমের পত্রালাপ। কতশত আলাপ, শিল্প আর জীবনের গল্প। ততদিনে মঞ্চে মঞ্চে আমাদের প্রাগাঢ় রোমাঞ্চ। দিনের পর দিন তোমাতে মোহবিষ্টের মত সঁপে দিলাম নিজের অজান্তে। আমি ততক্ষণে আমাতে আর নই, শুধুই তুমি সমস্তটা জুড়ে। শহর থেকে শহর আর রাজপথের মঞ্চে সাথী হয়েছি দুজনে দুজনার। পুরষ্কার আর প্রশংসায় আমরা ততদিনে পরিচিত মুখ। সকলের মুখে মুখে আমাদের নাম।