Mohona Mega Kitchen

  • Home
  • Mohona Mega Kitchen

Mohona Mega Kitchen Our focus is on repeatedly delivering innovative menus and ensuring a long term sustainable relations Our aim is to combine great taste with affordability.
(7)

Eating is one of life’s pleasure and pride – so is cooking and serving good foods to others. Mohona Mega Kitchen is a commercial catering service which specializes in the preparation of quality food and to serve them to satisfy the customer’s demands, and all these with a very reasonable price. Our kitchen is itself a state of art featuring automatic and semi-automatic cooking appliances and machi

neries in food catering in Bangladesh. Our focus is on repeatedly delivering innovative menus using the best quality ingredients and providing attentive friendly and professional customer service. Whether you are planning a formal or informal dinner or wedding event, a casual bbq or private party, corporate event or a small private dining experience in your own home, we offer bespoke menu design to suit all budgets and individual specifications – without ever compromising quality. We are dedicated to ensure customers’ expectations are exceeded by offering the best quality food at value for money prices, ensuring a long term sustainable relationship with the customers.

18/11/2024

বাংলাদেশের সুপার মার্কেট বনাম আমেরিকান সুপার মার্কেট

১৯৮২ সালের দিকে একবার আমার জাহাজ এম ভি জেড থ্রি নিয়ে আমেরিকা এসেছিলাম। ছাপানো কোন কিছু দেখলেই আমি পড়ে ফেলতাম। সে সময় একটা আমেরিকান এক পত্রিকায় আমেরিকায় সুপার মার্কেট এবং হাইপার মার্কেট সম্পর্কে একটা চমৎকার তথ্যবহুল লেখা পড়েছিলাম।

বিষয়বস্তুটা অনেকটা এরকম, আমেরিকায় প্রথম যখন সুপার মার্কেট চালু হলো তখন সমাজবিজ্ঞানীরা এটার প্রতিবাদ করেছিলেন। তারা বলেছিলেন আমেরিকায় প্রচলিত গ্রসারি দোকানগুলো ( মুদি দোকান বলা যেতে পারে ) এবং তাদের গ্রাহক এলাকার লোকজনের মধ্যে এক ধরনের এক ধরনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি করে। গ্রসারি দোকানগুলো যেন এলাকার ক্লাব ঘর। এখানে লোকজন আসেন গল্প করেন কেনাকাটা করেন নগদে কখনোবা বকিতে। সুপারমার্কেট গুলো আমেরিকান সামাজিক প্যাটার্ন ধ্বংস করে দিচ্ছে কারণে গ্রসারি দোকান গুলো উঠে যাচ্ছে। সৃষ্টি হয়েছে এক অসম প্রতিযোগিতা। সুপার মার্কেট গুলো যে দামে পন্য সরবরাহ করতে পারে গ্রসারি দোকানগুলো কোনক্রমেই সেই দামে পন্য বেচতে পারে না। এর একটা কারণ হলো সুপার মার্কেটগুলোর বিশাল পুঁজি, অত্যন্ত কর্মক্ষম (efficient) ক্রয় ব্যবস্থাপনা, বিশাল বিক্রয় ব্যবস্থাপনা। এতে করে তারা পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় থেকে সব থেকে কম দামে সব থেকে ভালো পণ্যটি সংগ্রহ করতে পারে। অন্য দিকে একই পন্য গ্রসারি দোকানগুলোর হাতে আসে কয়েক হাত ঘুরে যাতে করে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। আর আরেকটা ব্যাপার আছে, সুপারমার্কেট গুলোর কেন্দ্রীয় ক্রয় ব্যবস্থাপনার জন্য একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ পন্য কিনতে পারে ফলে তারা উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে ভালো রকম ডিসকাউন্ট বা মূল্য রেয়াত এক পায়। যে সুযোগ গ্রসারি দোকানগুলো পায় না ।

এখন দেখা যাচ্ছে সুপার মার্কেটের কারণে আমেরিকান জাতি পৃথিবীর মধ্যে সবথেকে ভালো খাওয়া দাওয়া করে যাকে বলে Well fed nation । এরপরে আমেরিকায় এলো হাইপার মার্কেট এগুলো বেশিরভাগই শহরের বাইরে স্থাপিত, বিশাল পার্কিং এরিয়া থাকে এইসব মার্কেটে। হাইপার মার্কেট থেকে আমেরিকানরা ন্যায্য মূল্যে একবারে সপ্তাহের বাজার বা মাসের বাজার করে নিয়ে আসতে পারে।

আমাদের দেশে সুপারমার্কেট এগুলো এক ধরনের প্রতারণা করছে গ্রাহকদের সঙ্গে। এরা নিজের পুঁজি না খাটিয়ে বিভিন্ন সরবরাহকারীদের কাছ থেকে পণ্য কিনে মধ্য স্বত্ব ভোগীদের মাধ্যমে এবং এ পণ্য কেনে বাকিতে ফলে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। ভুগতে হয় ক্রেতা সাধারণকে। অথচ সুপার মার্কেটের ক্ষেত্রে এরকম হবার কথা ছিল না। এগুলো যেন হয়ে দাঁড়িয়েছে উদ্যোক্তাদের টাকা বানাবার কারখানা আর উচ্চবিত্তের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় আরামে বাজার করার জায়গা হিসাবে।

আমাদের দেশের সুপার মার্কেটগুলো যদি সরাসরি গ্রামের উৎপাদক বা গ্রামের মোকামগুলো থেকে, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ সরাসরি পণ্য কিনতেন নগদ টাকায় ( কারণ তারা পণ্য বিক্রয় করেন নগদ টাকায় ), আমদানিকৃত পণ্য সমূহ মধ্য স্বত্ব ভোগীদের কাছ থেকে না কিনে নিজেরাই যদি আমদানি করে সুলভ মূল্যে বিক্রি করতে পারতেন । কিন্তু জনসেবার পথে না যেয়ে কৈ এর তেলে কৈ ভাজার এক অনৈতিক ব্যবসার মাধ্যমে লোক ঠকাবার ব্যবসায় মেতেছেন আমাদের তথাকথিত সুপার মার্কেট গলো।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যাপারটা ভেবে দেখতে অনুরোধ করছি।

06/11/2024

I gained 12 followers, created 6 posts and received 140 reactions in the past 90 days! Thank you all for your continued support. I could not have done it without you. 🙏🤗🎉

27/08/2024

VISTA ELECTRONICS Ltd. এর সৌজন্যে আজ ২৬ আগস্ট সোমবার টিএসসি তে বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ সরবারহ কার্যক্রমে ব্যস্ত ছাত্রদের জন্যে আমরা রান্নাকরা সরবারহ করলাম। মোহনা মেগা কিচেন

VISTA ELECTRONICS Ltd. এর সৌজন্যে আজ ২৬ আগস্ট সোমবার টিএসসি তে বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ সরবারহ কার্যক্রমে ব্যস্ত ছাত্রদের ...
27/08/2024

VISTA ELECTRONICS Ltd. এর সৌজন্যে আজ ২৬ আগস্ট সোমবার টিএসসি তে বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ সরবারহ কার্যক্রমে ব্যস্ত ছাত্রদের জন্যে আমরা রান্নাকরা সরবারহ করলাম। মোহনা মেগা কিচেন

তৈরি খাবার নিয়ে রাস্তায় ট্রাফিক ব্যবস্থায় সেবা দান রত ছাত্রদের পাশে আমরা মোহনা মেগা কিচেন ।
13/08/2024

তৈরি খাবার নিয়ে রাস্তায় ট্রাফিক ব্যবস্থায় সেবা দান রত ছাত্রদের পাশে আমরা মোহনা মেগা কিচেন ।

With legendary British - Bangladeshi Master Chef Tommy Miah who influenced the test bud of British Royals as well as com...
26/05/2024

With legendary British - Bangladeshi Master Chef Tommy Miah who influenced the test bud of British Royals as well as common British peoples to like our style of cooking.

Eid Mubarak Everyone
11/04/2024

Eid Mubarak Everyone

আজ ২৭ রমজান  । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশী  ওরিজিন এক কানাডিয়ান নাগরিক এর  সৌজন্যে   মোহনা মেগা কিচেন থেকে ৩০০ জন সুব...
07/04/2024

আজ ২৭ রমজান । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশী ওরিজিন এক কানাডিয়ান নাগরিক এর সৌজন্যে মোহনা মেগা কিচেন থেকে ৩০০ জন সুবিধা বঞ্চিত ব্যক্তিদের মধ্যে সেহেরি হিসাবে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হল। বিতরণ কাজে আমাদের সহযোগিতা করছেন রবিনহুড আর্মির এর স্বেচ্ছাসেবক গন ।

06/04/2024

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ধানম্ডি এবং উত্তরা নিবাসী দুই ভাই এর সৌজন্যে আজ ২৬ রমজান মোহনা মেগা কিচেন থেকে ২৫০ সুবিধা বন্চিত ব্যক্তিদের মধ্যে সেহেরি হিসাবে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হল। বিতরণ কাজে আমাদের সহযোগিতা করছেন দীপায়ন ফাউন্ডেশন এর স্বেচ্ছাসেবকরা ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ধানম্ডি নিবাসী এক সজ্জনের ফরমায়েশে আজ মোহনা মেগা কিচেন থেকে ২৫০ সুবিধা বন্চিন ব্যক্তিদের মধ্যে সেহে...
06/04/2024

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ধানম্ডি নিবাসী এক সজ্জনের ফরমায়েশে আজ মোহনা মেগা কিচেন থেকে ২৫০ সুবিধা বন্চিন ব্যক্তিদের মধ্যে সেহেরি হিসাবে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হল। বিতরণ কাজে আমাদের সহযোগিতা করছেন রবিনহুড আর্মির স্বেচ্ছাসেবকরা ।

We are honored to have famous British Chef Mr. Tommy Mia and executives from "Apon Bazaar" among us.
15/03/2024

We are honored to have famous British Chef Mr. Tommy Mia and executives from "Apon Bazaar" among us.

নাবিকের রোজনামচা - ২২      প্রত্যাবর্তন১৪ এপ্রিল ১৯৮৩আমরা আমেরিকার টেক্সাস রাজ্যের গ্যালভাস্টন বন্দরে ( Port of Galvesto...
06/02/2024

নাবিকের রোজনামচা - ২২ প্রত্যাবর্তন
১৪ এপ্রিল ১৯৮৩
আমরা আমেরিকার টেক্সাস রাজ্যের গ্যালভাস্টন বন্দরে ( Port of Galveston ) এসে পোঁছালাম। এই বন্দরকে বলা হয় সব কিছুর বন্দর । মালবাহী জাহাজ , যাত্রীবাহী জাহাজ , রোল অন / রোল অফ জাহাজ ও প্রমোদ তরী সবই এখানে দেখা যায় । গ্যালভাস্টন বন্দর টেক্সাস রাজ্যের সব থেকে বড় বন্দর এবং ব্যস্ততম বন্দর। এখানে প্রতি বৎসর ৪ মিলিয়ন টন মাল ওঠা নামা করে। এখান থেকে চাল বোঝাই করে আমরা যাব সৌদি আরবের দাম্মাম বন্দরে।

এখানে আমার থেকে একটু বয়সে বড় একজন আমেরিকান সেকেন্ড অফিসারের সঙ্গে পরিচয় হলো এবং বন্ধুত্ব হল স্থানীয় সিমেন্স ক্লাবে। আমেরিকায় বাণিজ্যিক নৌবহরের নাবিকদের বেতন অনেক বেশি এবং জাহাজ পরিচালনার অন্যান্য খরচও অনেক বেশি ফলে এরা তৃতীয় বিশ্ব এবং চিনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় কুলিয়ে উঠতে পারছেনা ।এই অসম প্রতিযোগিতা মোকাবেলা করার জন্য আমেরিকানরা সাধারণ কার্গো জাহাজ এর ব্যবসা বাদ দিয়ে উচ্চ প্রযুক্তির ও উচ্চগতির রোল অন / রোল অফ জাহাজ দিয়ে নৌপরিবহন ব্যবস্থা চালু করেছে কিন্তু এতে চাকরির সংখ্যা সীমিত হয়ে পরেছে। আমার বন্ধু টেড বর্তমানে বেকার । কিন্তু বেকার হলেও সে দেড় হাজার ডলারের মত ভাতা পায়। ঘুরে বেরানো তার নেশা। টেডের বড় একটা মাইক্রো বাস আছে । এটার মাঝখানের সিটগুলো ফেলে দিয়ে গাড়ির মেঝেতে সে মোটা কার্পেট বিছিয়ে নিয়েছে ফলে সে অন্য কোন শহরে ঘুরতে বেরোলে গাড়ির ভিতরেই সে রাত্রি যাপন করতে পারে, তাকে আর হোটেল ভাড়া করতে হয় না। টেড প্রায়ই গাড়ি নিয়ে হাজির হত আর আমরা ওর সঙ্গে ঘুরতে বের হতাম।

আমার জাহাজ কোম্পানির সঙ্গে আমার একটা দর কষাকষি চলছিল বেশ কিছুদিন থেকে। হিসাব মতে আমার একটা প্রমোশন পাওয়ার কথা কিন্তু ওরা আমাকে তা না দিয়ে কম পয়সায় কাজ চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমি বর্তমানে কাজ করছি শিক্ষানবিশ প্রকৌশলী (Apperentice Engineer), গ্রীক ভাষায় “দকিমোস মেখানিকোস” হিসবে ভাতা পাই ৭০০ ডলার, আমাকে থার্ড ইঞ্জিনিয়ার করা হলে বেতন হবার কথা ১৫০০ ডলার। গ্যালভাস্টন বন্দর থেকে আমাদের একজন থার্ড ইঞ্জিনিয়ার গ্রীসে ফিরে গেল। জাহাজ কোম্পানির ইচ্ছা থার্ড ইঞ্জিনিয়ার ছাড়াই আমরা জাহাজ ইউরোপে নিয়ে যাই, ওখানে ওরা একজন থার্ড ইঞ্জিনিয়ার আনতে পারবে। এরকম করার কারণ হলো যে থার্ড ইঞ্জিনিয়ার চলে গেছে তাকে ওদের আমেরিকা থেকে গ্রীস পর্যন্ত উড়োজাহাজ ভাড়া দিতে হয়েছে। ইউরোপে যেয়ে আর একজনকে নিলে ভাড়া দিতে হবে অনেক কম। আমি ও সুযোগ পেয়ে গেলাম। আমি ক্যাপ্টেনকে লেটার অফ সাইন অফ মানে পদত্যাগ পত্র জমা দিলাম। জাহাজে নাবিকদের চুক্তিবদ্ধ হওয়াকে বলে ‘সাইন অন’ আর চুক্তি সমাপ্ত করাকে বল ‘সাইন অফ’ । ক্যাপ্টেন যাতে অন্য কোন অজুহাতে আমাকে আটকে দিতে না পারে তাই আমার পদত্যাগ পত্রের একটা অনুলিপি হারবার মাস্টারকেও দিলাম।

আমেরিকার শহর বন্দর গুলোতে জনসমাগমের জায়গায় প্রচুর পরিমাণে পাবলিক টেলিফোন বুথ থাকে। এরকম ফোন ব্যবহার করে আমেরিকার বিভিন্ন শহরে অবস্থানরত আমার সব বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করলাম। সবাই পরামর্শ দিল, এই ‘স্বর্গরাজ্যে’ যখন এসে পড়েছ তখন আর ফেরত যেও না, জাহাজ থেকে নেমে পড়ো, এখানে সেটেল কর, জীবন বদলে যাবে ।

আমার জাহাজ কোম্পানি পড়ল বিপদে যদি আমি চলে যাই তবে ওদেরকে আমাকে ভাড়া দিতে হবে বাংলাদেশ পর্যন্ত এবং অন্তত একজন ইঞ্জিনিয়ার কে আনতে হবে। বেকারদায় পড়ে ওরা আমাকে প্রমোশন দিতে রাজি হল। কিন্তু আমার বন্ধুদের সঙ্গে আমেরিকায় থেকে যাওয়ার প্রলোভন আর সুযোগ সুবিধার কথা এত শুনলাম যে আমার মন আমেরিকা থাকার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল। প্রমোশন হওয়া সত্বেও আমেরিকায় নেমে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম।

এই অবস্থায় একদিন সন্ধ্যায় আমাদের জাহাজের সেলুনে বসে টেলিভিশন দেখছিলাম । এমন সময় কোন আমেরিকানের ফেলে যাওয়া একটা স্থানীয় পত্রিকা পেলাম। ঐদিন আমি ডিউটি অফিসার হওয়ায় আমার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই, বন্ধুরা সবাই বাইরে শহরে তাই পত্রিকা পরে সময় কাটানোর চেষ্টা করলাম। পত্রিকায় এমন একটা ঘটনা পড়লাম যা আমার সমস্ত পরিকল্পনা উল্টা পাল্টা করে দিল। আমার চেতনায় বিপ্লব ঘটিয়ে দিল। ঘটনাটা বলছি।

এই শহরের কোন এক আবাসিক এলাকায় দুইটি ভারতীয় পরিবার পাশাপাশি বসবাস করে। এই দুই পরিবারের ১৩/ ১৪ বছরের দুইটা ছেলে মেয়ে রয়েছে। বাচ্চাগুলো তাদের আমেরিকার বন্ধু-বান্ধবদের মতো ডেটিং করতে চায়। কিন্তু ভারতীয় বাবা-মা তাদেরকে বোঝাবার চেষ্টা করেন, আমরা হলাম ভারতীয়, আমাদের ভিন্ন মূল্যবোধ ভিন্ন সংস্কৃতি, তাই তোমরা আমেরিকানদের মত মেলামেশা করতে পার না। তোমাদের ১৮ বৎসর বয়স হলে পরে তোমরা ডেটিংয়ের সুযোগ পাবে। বাচ্চাগুলোর মনে হল তাদের বাবা বা তাদের বৈধ অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে কারণ তাদের সমবয়সী বন্ধু-বান্ধবরা ডেটিং এর সুযোগ পাচ্ছে।

আমেরিকায় ভালোভাবে থাকতে হলে স্বামী স্ত্রীর দুজনকে কাজ করতে হয়। একদিন মেয়ে বাচ্চাটার বাবা এই ভদ্রলোক অসময়ে বাসায় এসে বাচ্চা দুটোকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেললেন। রাগে অন্ধ হয়ে ভদ্রলোক ছেলেটাকে আক্রমণ করলেন। আমাদের দেশের ছেলে হলে এত বড় অপরাধ করার পরে ও লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যেত । আমেরিকায় জন্ম হওয়া এই ছেলের সেই অপরাধ বোধ নেই বরং তাকে ‘বঞ্চিত’ করার ক্রোধ রয়ে গেছে। ছেলেটা ভদ্রলোকের সঙ্গে হাতাহাতি যুদ্ধে অবতীর্ণ হল। একপর্যায়ে ছেলেটি ভদ্রলোকের কান কামড় দিয়ে বিচ্ছিন্ন করে ফেলল এবং পরে রক্তাক্ত অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে রাস্তার দিকে দৌড় দিল । ভদ্রলোকের বাড়ির সামনে বেশ বড় একটা লন ছিল এবং শেষ মাথায় রাস্তা সংলগ্ন ছিল অল্প উঁচু প্রাচীর। ছেলেটা দৌড়ে লন পার হয়ে প্রাচীর টপকাবার আগেই ভদ্রলোক তার আলমারি থেকে বন্দুক বের করে গুলি ভরে গুলি করে দিলেন। ছেলেটার পিঠে এবং পশ্চাৎ দেশে ৭০-৮০টা ছররা ঢুকে গেল। ভাগ্যক্রমে বন্দুকের গুলিটা ছররা হওয়ায় ছেলেটা প্রাণে বাঁচল বটে কিন্তু ভাল রকম আহত হলো । এই নিয়ে পরে আইন আদালত হল। পত্র পত্রিকায় অনেক হৈ চৈ হল , আলোচনা হল। অভিযোগ ভারতীয়রা নাকি আমেরিকানদের কালচারাল প্যাটার্ন ভেঙ্গে ফেলছে ।

স্কুলে থাকার সময় কোলকাতার বিখ্যাত লেখক শঙ্করের ‘দারুণ ভক্ত পাঠক ছিলাম। শঙ্করের “চৌরঙ্গী” পড়েছি পাঠ্য বই মত আগ্রহ আর নিষ্ঠা নিয়ে। শঙ্করের ইংরেজ ব্যারিস্টার এর করণিক থেকে টাইপ রাইটার মেশিনের মেকানিক আবার কোলকাতার হোটেল চৌরঙ্গীর ফ্রন্ট ডেক্স এর কর্মী এবং সব শেষে জীবন ঘনিষ্ঠ জনপ্রিয় লেখকে পরিণত হবার গল্প আমার জন্য অনুপ্রেরণা ছিল। আমার মনে পড়লো শঙ্করের “এপার বাংলা ওপার বাংলা” নামের একটা বই পড়েছিলাম। সেই বইতে একটা গল্প ছিল। আমেরিকান সরকারের সাংস্কৃতিক অধিদপ্তরের আমন্ত্রণে লেখক শঙ্কর আমেরিকায় আসেন ভ্রমণে। এক শনিবার সন্ধ্যায় শঙ্কর গেছেন তার এক আত্মীয়ার বাসায় নৈশ ভোজের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে। সন্ধ্যার পরে শঙ্করের মেজবান ভদ্রমহিলার তার অল্প বয়েস এর মেয়ে বাইরে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিল আর ভদ্রমহিলা এক গ্লাস দুধ নিয়ে মেয়েকে সেটা পান করাবর জন্য মেয়েকে কাতর অনুনয় বিনয় সহকারে অনুরোধ করে যাচ্ছিলেন । মেয়েটা ওজন বাড়ার অজুহাত দেখিয়ে বারবার দুধ খেতে অস্বীকার করছিল । শেষ পর্যন্ত মেয়েটা দুধ পান না করেই বাইরে চলে গেল আর মা অত্যন্ত হতাশ হয়ে বসে পড়লেন।

ব্যাপারটা লেখক শঙ্করের কাছে গোলমেলে বলে মনে হল। উনি তার মেজবান ভদ্রমহিলা আত্মীয়াকে বললেন, এক গ্লাস দুধই তো, এর জন্যে এত বাড়াবাড়ি রকমের অনুরোধ এবং না খাওয়ার জন্য হতাশ হওয়ার কারণ কি। ভদ্রমহিলা বললেন, আজকে শনিবার রাত, মেয়েটা আমার ডেটিং যাচ্ছে । আমার মেয়েটা আজ আর ঘরে ফিরবে না বরং তার ছেলে বন্ধুর সঙ্গে রাত কাটাবে। তাই আমি দুধের মধ্যে জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি গুলে দিয়েছে। মেয়েটা দুধ পান করল না বলে আমি চিন্তায় অস্থির।

আমি অত্যন্ত চিন্তায় পড়ে গেলাম। আমার বয়স প্রায় ২৭ । আমি যদি আমেরিকায় থেকে যাই তাহলে আমার বৈধতা পেতে সময় লাগবে প্রায় ১০ বছর অর্থাৎ তখন আমার বয়স হবে ৩৭ বৎসর। তার মানে আমেরিকায় থাকা অবস্থায় আমাকে বিয়ে করতে হবে । এ অবস্থায় আমার ভাগ্য নেহায়েত ভাল হলে একটা বাঙ্গালি মুসলিম জীবন সঙ্গী পাব । আর ভাগ্য খারাপ হলে স্থানীয় কোন মেয়েকে বিয়ে করতে হবে । আমি যদি বিয়ে করি এদেশে এবং আমার ১৪ বছরের মেয়ে যদি আমাকে এসে বলে, আজ রাতে আমি বাসায় ফিরব না তাহলে আমি কি করব। অনেক ভেবে দেখলাম খুব সাধারণ মধ্যবিত্ত বাঙালির মূল্যবোধ আর আত্মসম্মানবোধ আমাকে বাধ্য করবে হয় আত্মহত্যা করতে অথবা মেয়েকে হত্যা করতে। এখানে বলে রাখা ভাল, আমাদের পূর্ব পুরুষরা আফগান হবার কারণে ধমনিতে সেই রক্ত কিছুটা রয়ে গেছে।

আজকাল দেখি প্রায়ই পাকিস্তানিরা এরকম হত্যাকাণ্ড ঘটায়। আমেরিকানরা এই হত্যাকাণ্ডের নাম দিয়েছে “আনার কিলিং”। এই সেদিন দেখলাম এক পাকিস্তানি ভদ্রলোক আর প্রথম পক্ষের ছেলে মিলে ভদ্রলোক এর প্রথম পক্ষের মেয়ে আর ২য় পক্ষের স্ত্রী কে হত্যা করেছেন নাইট ক্লাবে যাবার আর সূরা পানের “অপরাধে” । অনেক ভেবে চিন্তে আমি আমার পদত্যাগ পত্র তুলে নিলাম। আমার চীফ ইঞ্জিনিয়ার এবং ক্যাপ্টেন অনেক খুশি হলেন কারণ গ্রীকরা চুক্তির সাত মাস কোন রকমে কাটিয়ে জাহাজের জগত টাকে চেনার আগেই দেশে ফিরে যায় পক্ষান্তরে আমি আছি লম্বা সময় ধরে এবং জাহাজের সমস্ত ম্যানুয়াল ইংরেজি ভাষায় , এরা অভ্যস্ত হয়ে গেছে আমাকে সঙ্গে নিয়ে ম্যানুয়াল পড়ে সমস্যা গুলোর সমাধান খুঁজতে, তাই আমাকে ওদের দরকার।

তখন চিন্তা করিনি কিন্তু এখন পরিণত বয়সে পৌঁছে বুঝতে পারি, ইসলামের একটা বিধান আছে কেউ যদি কোন পাপ কাজ প্রচলন করে তবে পরবর্তীরা যতবার সেই পাপ কাজ করবে ততবারই পাপীদের সঙ্গে সঙ্গে প্রচলন কারীর আমলনামায় তা লেখা হবে। আদি পিতা হযরত আদমের সন্তান কাবিল ঈর্ষা বসত তার ভাই হাবিলকে হত্যা করে। এটাই পৃথিবীর প্রথম হত্যাকাণ্ড তাই আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে যত হত্যাকাণ্ড ঘটবে তার পাপ হত্যাকারীর সঙ্গে সঙ্গে কাবিলেরও আমলনামায়ও লেখা হবে । আজ ভাবি আমি যদি তখন আমেরিকায় থেকে যেতাম শুধুমাত্র ভালো রোজগার এবং উন্নত জীবন যাপনের আশায় এবং আমার পরিবারের পরবর্তী বংশধর এর কেউ বিপথগামী হলে তার দায় আমাকে বহন করতে হতো। সেক্ষেত্রে জাগতিক লাভের আশায় আমার হিজরত আমার জন্যে পরিণামে ব্যাপক অকল্যাণ বয়ে আনত । আজ মনে হয় ফিরে এসে আমি ভালই করেছি। আজকে দেখতে পাচ্ছি আমার যে সব বন্ধু বান্ধব আমাকে আমেরিকায় থেকে যাবার জন্যে উৎসাহিত করেছিল তাদের অনেকেরই সন্তানরা স্থানীয়দের সঙ্গে গাঁটছড়া বেধে তাদের মুসলিম পরিচয় হারাতে বসেছে । অনেকে বিবাহ বিচ্ছেদের শিকার হয়েছে । অবশ্য এরকম অনেক পরিবারই আছে যারা প্রবাসে দেশের চাইতেও বেশি ধর্মভীরু হয়েছে যাকে বলা যায় Practicing Muslim । অনেকের ক্ষেত্রেই প্রবাসে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করার এবং নিজের শেকড় কে দৃঢ় ভাবে আঁকড়ে ধরার ঘটনাও দেখেছি। কিন্তু তারপরেও প্রশ্ন থেকে যায় পরবর্তী প্রজন্মের ভাগ্য সম্পর্কে।

নাবিকের রোজনামচা – ২১  বাউলের  পোশাক এবং আামিকিছুদিন আগে চট্টগ্রাম এসেছি একটু ব্যবসার কাজে। কয়েকজন ব্যবসায়ী বন্ধুর সঙ্গে...
02/02/2024

নাবিকের রোজনামচা – ২১ বাউলের পোশাক এবং আামি

কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম এসেছি একটু ব্যবসার কাজে। কয়েকজন ব্যবসায়ী বন্ধুর সঙ্গে এক রেস্তোরায় বসেছি বৈকালিক চা পানের জন্য । হটাত লক্ষ্য করলাম রাস্তায় বিচিত্র বেশধারী এক বাউল একতারা বজিয়ে গান গেয়ে ভিক্ষা করছেন। তার পড়নে একটা বাদশাহি গোছের শেরওয়ানী , এর উপর তিনি রংবেরং কাপড় এর এত তালি লাগিয়েছেন যে মূলটাই হরিয়ে গিয়েছে।

বন্ধুদের কেউ বললেন সম্ভবত এটা ওনার বিয়ের শেরওয়ানী যা কিনা বিয়ের দিন ছাড়া প্রায় পড়াই হয়না । উনি বরং এটার যথোপযুক্ত ব্যাবহার করছেন। কেউ আবার কৌতুক করে বললেন হয়তো বাউলের প্রেয়সী তাকে ছেড়ে চলে গেছে সেই শোকে তিনি বাউল হয়ে পথে বেড়িয়েছেন এবং বিয়ের শেরওয়ানীটা পরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন । জীর্ণ হয়ে যাবার পরও তিনি রংবেরং কাপড় এর নতুন নতুন তালি লাগিয়ে চলেছেন। আমার কাছে মনে হল আমি নিজেই যেন বাউলের ঐ শেরওয়ানীটার মত।
প্রায় তিন বছরের সমুদ্রযাত্রা শেষ করে দেশে এসেছি। দেশে এসে ভাবলাম দেশে একটা কিছু করা যায় কিনা। তখন আমাদের পরিবারে কোন ব্যবসায়ী ছিলেন না। আমাদের পরিবারের বেশির ভাগই শিক্ষক এবং সরকারি চাকরিজীবী।
একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর কাছে মনের ইচ্ছাটা প্রকাশ করলাম। আমার বন্ধু আমাকে প্রস্তাব করলেন তার জানাশোনা পুরাতন ঢাকার এক ব্যবসায়ি ভদ্রলোক আছেন যার কাছে আমরা পরামর্শের জন্য যেতে পারি। সে মতে আমার বন্ধু আমাকে নিয়ে গেলেন পুরাতন ঢাকার তার এক বন্ধু বাবার কাছে। ভদ্রলোককে আমি আমার ব্যবসা করার অভিপ্রায় জানালাম। বেশ কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলার পরে উনি ঢাকাইয়া বাংলায় বললেন, ব্যবসা করবার আইছেন তো ফিটিং জানেন নি। তখন দেশে অনেক কল কারখানা সরকারি অর্থ আনুকূল্যে তৈরি হচ্ছিল। মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এ ফিটার্স জব বা ফিটার্স ওয়ার্ক বলে একটা বিষয় আছে। আর তা হল নকশা দেখে মেশিনপত্র সংযোজন (Assemble) করা অথবা খুলে ফেলা (Disassemble) । সাধারণত রক্ষণাবেক্ষণের সময় এ কাজটা করতে হয় অথবা মেশিন বসাবার ( Installation ) এর সময় এটার প্রয়োজন হয়। আমি ভাবলাম আমার পরামর্শদাতা চাচা মিয়া সম্ভবত আমাকে এরকম কোন কারখানা নির্মাণের কাজ পাইয়ে দিবেন । আমি খুব আত্মবিশ্বাস এর সঙ্গে বললাম যে আমি ফিটিং এর কাজ খুব ভালো মতো জানি। আমার বলার মধ্যে হয়তো কিছু একটা ছিল যাতে করে এই অভিজ্ঞ চাচা মিয়া বুঝতে পারলেন আমি বিষয়টা বুঝতে পারিনি। উনি আমাকে আবার প্রশ্ন করলেন, কন তো দেখি ফিটিং কারে কয়। আমি আমার ব্যাখ্যা দিলাম। চাচা মিয়া হো হো করে হেসে উঠলেন। বললেন আরে মিয়া আমি যে ফিটিং এর কথা কইতাছি এইটা সেই ফিটিং না, এইটা হইল মিথ্যা কথা এমনভাবে কইতে হইবো যেন মানুষে মনে করে তুমি সত্য কথা কইতাছো এবং তোমার উপর ভরসা করে। এদেশের ব্যবসা করতে আইলে হগলদের আগে ফিটিং শিখন লাগবো। যাই হোক সে যাত্রায় ব্যবসা করা হলো না কারণ আমার জাহাজ কোম্পানি তাদের আর একটা নতুন জাহাজে যোগদান করার জন্য আমাকে ইংল্যান্ডে ডেকে পাঠাল। আমি ভাবলাম আর কয়েকটা ভয়েজ করে আবার ব্যবসা কথা ভাবা যাবে।

এরপরে আবার বেশ কয়েকটা ভয়েজ করে দেশে ফিরে এলাম। আমার মা আমাকে চাপ দিলেন বিয়ে করার জন্য এবং নিজেই কনে পছন্দ করলেন। কনে আমার বড় বোনের অতি পরিচিত এক ভদ্রলোকের ছোট বোন। আমি মাকে অনেক বোঝাবার চেষ্টা করলাম আর দু একটা ভয়েজ করে আসি তারপর নাহয় বিয়ে করা যাবে কিন্তু উনি কিছুতেই রাজি হলেন না কারন তার মতে আমি নাকি বুড়ো হয়ে যাচ্ছি , এখানে উল্লেখ্য যে তখন আমার বয়স ৩০ এর কাছাকাছি।

এর মধ্যে হটাত একদিন আমাদের মা ফজরের জায়নামাজে দাঁড়িয়ে সম্ভবত নামাজ আদায় করার পর হৃদরোগে (Massive Heart Attack) এ আক্রান্ত হয়ে আমাদের শোক সাগরে ভাসিয়ে ইহলোক ত্যাগ করলেন।
এ অবস্থায় বিয়ে করাটা আমার জন্য এক প্রকার বাধ্যতামূলক হয়ে উঠল। এবার বিয়েটা করেই ফেললাম এবং দেশেই কিছু একটা ব্যবসা বাণিজ্য করার চেষ্টা করতে থাকলাম। এতদিন পরে পুরাতন ঢাকার সেই চাচা মিয়ার কথার মর্ম অনুধাবন করতে সক্ষম হলাম। বেশ কয়েক জায়গায় নিজেই ফিটিং এর ফাঁদে পড়লাম। ব্যবসার নানা কলা কৌশল আয়ত্ত করলাম আর এটা করতে যেয়ে নিজের লালিত মূল্যবোধের অনেকটাই বিসর্জন দিতে হল। এখন নিজেকে মনে হয় ঐ বাউলে শেরওয়ানীর মত তালির পর তালি লাগানোর ফলে যার আমার মূলটাই হারিয়ে গেছে ।

নাবিকের রোজনামচা – ১২  রুপান্তর (Transformetion)এলেফতেরিস পাপাদোপোলস  ( বাংলায় বলা যেতে পারে ‘স্বাধিন পাপাদোপোলস’ ) আমাদ...
06/01/2024

নাবিকের রোজনামচা – ১২ রুপান্তর (Transformetion)

এলেফতেরিস পাপাদোপোলস ( বাংলায় বলা যেতে পারে ‘স্বাধিন পাপাদোপোলস’ ) আমাদের জাহাজে যোগদান করে একজন অ্যাপ্রেন্টিস ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে। ওকে আমরা লেফতেরিস বলে ডাকতাম , ও বয়সে আমার থেকে কিছুটা ছোট । আমিও তখন অ্যাপ্রেন্টিস ইঞ্জিনিয়ার ফলে আমাদের দুজনের মধ্যে দ্রুতই বন্ধুত্ব জমে উঠল। লেফতেরিস গ্রিসের ক্রিট দ্বীপের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। আমরা দুজনে একসঙ্গে বাইরে ঘুরতে যেতে পারি না। যেদিন আমি বাইরে যাই সেদিন ওকে থাকতে হবে ইঞ্জিন রুমে ওয়াচ কিপিং এ। যেদিন ও বাইরে যায় সেদিন আমাকে থাকতে হয় ওয়াচ কিপিং এ । এভাবেই চলছিল।

সম্ভবত ১৯৮২ সালের শেষের দিকে আমরা এলাম সুইডেনের গোথেনবার্গ (Gothenburg) বন্দরে । গোথেনবার্গ নর্ডিক দেশের বন্দর গুলোর মধ্যে সবথেকে বড় বন্দর । এই বন্দরে আমাদের একটু লম্বা সময় থাকতে হলো। লেফতেরিস একদিন বাইরে থেকে এসে বলল, তোমার সঙ্গে গোপন কথা আছে। যদিও আমরা আমর কাবিন বা ওর ক্যাবিনেই বসতে পারতাম কিন্তু লেফতেরিস অনুরোধ করল বাইরে খোলা আকাশের নিচে বসতে। বুঝলাম ব্যাপারটা ওর কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সেই মতে রাত দশটা এগারোটার দিকে আমরা জাহাজের একেবারে পশ্চাদ্ভাগে একটা সুবিধাজনক নির্জন জায়গায় গিয়ে বসলাম। আজ আমার ওয়াচ কিপিং এর ডিউটি ছিল আর লেফতেরিস বাইরে যায় নাই। আমি একটু অবাক হলাম কারণ কোন অবস্থায় ও বাইরে যাওয়ার সুযোগ হারাতে রাজি ছিল না। কোন রকম ভণিতা ছাড়া এলেফতেরিস জানালো ও সুজানা নামের এক মেয়ের প্রেমে পড়েছে। এই বন্দরের জনপ্রিয় এক ডিসকোটেখে দুজনার পরিচয় হয়। দুজনেই ভাল ইংরেজি জানায় ভাব বিনিময় সহজ হয়ে ওঠে। সেই থেকে এই বন্দরের অবস্থানকালে বাইরে যেয়ে সে বেশিরভাগ সময় সুজানার সঙ্গে কাটিয়েছে। এখন আমি বুঝতে পারলাম কেন এই বন্দরে অনেকবার ওর কাতর অণুরোধে ওর ওয়াচ কিপিং এর ডিউটি আমাকে করতে হয়েছে।

গ্রীকদের নাবিকদের কাছে এরকম প্রেমে পড়া বা মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়া খুবই সাধারণ ও স্বাভাবিক ঘটনা। তখনকার দিনে যোগাোগের জন্যে মোবাইল ফোন ছিলনা। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরবর্তী বন্দরে এরা আবার নতুন করে নতুন কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব করে এবং আগের গুলো ভুলে যায়।

আমার মনে পড়লো কিছুদিন আগে আমাদের এক সুপুরুষ (Handsome) নাবিক মানলিস ব্রাজিলের স্যান্টোস বন্দরে সুন্দরী এক ব্রাজিলিয়ান মেয়ের প্রেমে পড়ে। চলে আসার কয়েক দিন আগে সেই মেয়েকে ৭০ ডলার দামের একটি আরমানি ব্রান্ডের সুগন্ধি উপহার দেয়। জাহাজ ছাড়ার একদিন আগে মানোলিস জাহাজের সেলুনে ঢুকলো একটা প্যাকেট নিয়ে ভিতরে দেখা গেল সেই আরমানি সুগন্ধির বোতল। জিজ্ঞেস করলাম , কি ব্যাপারমেয়েটার সঙ্গে বন্ধুত্ব কি ভেঙ্গে গেল। ও জবাব দিল, অনেক ভেবে দেখলাম আমি এখান থেকে চলে যাব আর মেয়েটা আমারই দেওয়া সুগন্ধি মাখবে আর অন্য লোকে তা শুকবে এটা মেনে নেওয়া যায় না তাই ওকে আমি ১২০ ডলারের একটা সোনার চেইন দিয়ে এই সুগন্ধির বোতলটা ফেরত নিয়ে এসেছি। বুঝলাম অংকের মাথা ওর খুবই ভালো !

সে যাই হোক এলেফতেরিস জানালো সে সুজানাকে গভীরভাবে ভালোবেসে ফেলেছে সুতরাং সে এই দেশে থেকে যেতে চায়। ও আমার সহযোগিতা এবং পরামর্শ চায়।

বুঝলাম এটাই ছিল ওর প্রথম সমুদ্র যাত্রা ফলে অভিজ্ঞ গ্রীক নাবিকদের মত ঘাটে ঘাটে প্রেমে পড়ার ঐতিহ্যটা ও এখনো রপ্ত করে উঠতে পারেনি। অনেক রাত পর্যন্ত দুজনে পরামর্শ করে পরিকল্পনা গ্রহণ করলাম। জাহাজ ছাড়ার আগের দিন ও ছোট একটা ব্যাগে করে ওর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে যাবে অন্যান্য দিনের মতো কিন্তু সেই রাতে আর ও ফিরবে না। ওর পাসপোর্ট রয়ে গেছে ইমিগ্রশন পুলিশের কাছে তাই ওকে নামতে হবে পাসপোর্ট ছাড়া সম্পুর্ন অবৈধ ভাবে। ও তাতেই রাজি ।

ও আমাকে প্রস্তাব করল ওর ক্যাবিনে ওর যে ক্যাসেট রেকর্ডার আছে এবং অন্যান্য টুকিটাকি জিনিসপত্র যা আছে তা যেন আমি নিয়ে রাখি। আমি বললাম এই কাজ ভুলেও করো না তাহলে ক্যাপ্টেন ভাববে তোমার অন্তর্ধানের ব্যাপারে আমি আগে থেকেই ওয়াকিবহাল ছিলাম।
রাতে লেফতেরিস আর ফিরল না। পরদিন সকাল ১১ টায় আমাদের বন্দর থেকে বের হয়ে যাওয়ার কথা। আমরা দুপুর একটা পর্যন্ত অপেক্ষা করে বন্দর কর্তৃপক্ষ আর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে লেফতেরিস এর অন্তর্ধান এর কথা জানিয়ে বন্দর ছেরে বেরিয়ে এলাম। তখনকার দিনে মোবাইল ফোন ছিল না ফলে ওকে ট্রেস করার আর কোন উপায়ও ছিল না।

অনেকদিন পরে ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরে আবার গোথেনবার্গ এসেছি জাহাজ নিয়ে। লেফতেরিস এর কথা খুব মনে পড়ছিল, ভাবছিলাম ওকে কি করে খুঁজে পাওয়া যায়। আমাদের এক সপ্তাহ আগে আসা পাশের গ্রীক জাহাজের নাবিকরা জানালো এই বন্দরে ক্রেতা ( গ্রিকরা ক্রিট দ্বীপ কে ক্রেতা বলে ) নামের ছোট্ট কিন্তু সুন্দর এক গ্রিক রেস্তোরাঁ আছে যার মালিক একজন গ্রিক এবং এখানে সুস্বাদু অথেনটিক গ্রিক খাবার পাওয়া যায়। এই রেস্তোরাঁয় একটি নাচের ফ্লোর ও আছে এবং গ্রিক স্টাইল নাচের সাথে ভাঙ্গার জন্যে প্লেট ও কিনতে পাওয়া যায়। নাচের সময় মদ্যপান করা আর চীনামাটির প্লেট ভাঙ্গা গ্রিকরা খুব উপভোগ করে। আমার বন্ধুরা খুব আগ্রহী হল এই রেস্তোরাঁ যাওয়ার জন্য। আমিও আগ্রহী হলাম রেস্তোরাঁর মালিক এই ভদ্রলোকের কাছে আমার বন্ধু লেফতেরিস এর কোন কোন হদিস পাওয়া যায় কিনা এই আশায়।

রেস্তোরায় এসে দেখা গেল এটা যেন এক টুকরা গ্রিস । এমপ্লিফায়ারে মৃদুমন্দ গ্রিক গান বাজছে , দেয়ালে ক্রিট দ্বিপের সুন্দর সুন্দর ছবি ঝুলছে। কাউন্টারে এক সুবেশধারি সুন্দরী সুইডিশ ভদ্র মহিলা বসে আছেন। আমাদের গ্রিক ভাষায় কথাবার্তা শুনে তিনি নিজেই কাউন্টার থেকে নেমে আমাদেরকে ভালো একটা টেবিলে বসার ব্যবস্থা করলেন।

কিছুক্ষণের মধ্যে রেস্তোরার কিচেন থেকে লম্বা টুপি আর এ্যাপ্রন পড়া গ্রিক শেফ বেরিয়ে এলেন আমাদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার উদ্দেশ্যে। আমি হা হয়ে গেলাম । আরে এ তো আমাদের লেফতেরিস।

বাকি গল্পটুকু লেফতেরিস এর জবানিতেই বলি। খুব বেশি চিন্তাভাবনা না করে এবং অগ্র পশ্চাৎ বিবেচনা না করে জাহাজ থেকে নেমে পড়লাম। সুজানা খুব খুশি হল । ও আমাকে নিয়ে গেল ওর ফ্ল্যাটে। দু তিন সপ্তাহ খুব আনন্দেই কাটলো কিন্তু এরপর আমি বিমর্ষ হতে শুরু করলাম। সুজানা সকালে কাজে বেরিয়ে যায় আমি একা একা অ্যাপার্টমেন্টে থাকি। সন্ধ্যায় ও ফিরে আসে। আমার কাছে তেমন কোন টাকা পয়সাও নেই । আমাকে সুজানার উপার্জনের অর্থে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। কিছুটা হীনমন্যতায় ভুগছিলাম। আমার কাছে পাসপোর্ট নেই, নেই কোন ভিসা এবং সুইডিশ ভাষার এক বর্ণ ও জানিনা । এ অবস্থায় বাইরে যেয়ে যে কোনো কাজ খুঁজে নেব তার ও কোন উপায় দেখছি না । এভাবে সুজানার অন্ন ধ্বংস করব এ ব্যাপারটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না । আমার বিমর্ষ ভাব দেখে সুজানা বারবার কারণ জানতে চাচ্ছিল। পরে ওকে খুলে বললাম ব্যাপারটা। ও সস্নেহে জানালো এর জন্য যেন আমি মন খারাপ না করি আমি সুইডিশ ভাষা শিখে উঠলে ও আমার জন্য একটি কাজের ব্যবস্থা করতে পারবে। আমাকে হয়তো আরও ৫-৬ মাস ভাষা শেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আমার বৈধ কাগজপত্র না থাকায় আমি কোন ভাষা শিক্ষার স্কুলেও ভর্তি হতে পারছি না। আমাকে যেটুকু শিখছি তা হচ্ছে তার সুজানার সঙ্গে কথা বলে।

ঘরে বসে থাকার একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পাবার জন্য আমি সুজানাকে বললাম, আমি কিছু গ্রিক রান্না করতে চাই তুমি আমাকে জিনিসপত্র এনে দাও। এক ছুটির দিনে সুজানার সঙ্গে বেরিয়ে সুপার মার্কেট থেকে আমার করা তালিকা অনুযায়ী জিনিসপত্র নিয়ে এলাম । শুরু হল আামার গ্রীক স্টাইলে রান্নার মহরা। প্রথম দিন বানালাম “পাস্তিচো” ( এক রকম গ্রিক স্টাইল বেকড্ পাস্তা ) । পরর দিন বানালাম “গেমিস্তা” ( টমেটো আর ক্যাপসিকাম এর মধ্যে কিমা ও পোলাও এর পুর ঢুকিয়ে বেক করা ) । দুটো পদই সুজানর প্রশংসা পেল । আমরও আত্ম বিশ্বাস বেড়ে গেল ।

আমি আগে থেকেই রান্নায় মোটামুটি পারদর্শী ছিলাম। আমার দ্বীপ ক্রেতা অতি সুন্দর একটি পর্যটন কেন্দ্র । গ্রীষ্মের ছুটিতে যখন আমাদের দেশে ব্যাপক পর্যটক এর সমাগম হয় তখন রেস্তরা গুলোতে কাজের লোকের অভাব দেখা দেয়। ছাত্র অবস্থায় বেশ কয়েকবার এরকম গ্রীষ্মের ছুটিতে বিভিন্ন রেস্তোরায় শেফের সহকারী হিসেবে কাজ করেছি। বেশিরভাগ ছাত্র গ্রীষ্মের ছুটিতে রাজ মিস্ত্রির সহকারী হিসাবে অথবা রেস্তরায় পরিবেশনকারী হিসাবে কাজ করে ( আমি এমন কোন গ্রিক চীফ ইঞ্জিনিয়ার বা ক্যাপ্টেন দেখনি যে ছাত্রাবস্থায় এরকম কায়িক শ্রমের কাজ না করেছেন - লেখক ) । প্রথমটায় মজুরি বেশি, পরেরটায় বখশিশ বেশি । আমি বরাবর রান্না ঘরের কাজই পছন্দ করেছি । মাছ ,মাংস ,সবজি, চীজ ইত্যাদি কাঁচামাল জিভে জল আনা সুস্বাদু ডিশে রূপান্তরিত হবার প্রক্রিয়াকে আমার কাছে একটি কবিতার মত শিল্প মনে হত।

আমার প্রথম দিকের সব রান্নাই সুজানার মনে ধরল। সুতরাং রান্নার কাজ চলতে লাগলো মহোৎসাহে , আমার জানা জনপ্রিয় গ্রিক রেসিপিগুলো বানাতে থাকলাম । আমারও সময় কাটানো কিছুটা সহজ হয়ে এল। সুজানার আমার তৈরি করা খাবারের প্রশংসা আমাকে উৎসাহ আর আনন্দ জোগাতে থাকল। এর মধ্যে একদিন সুজানার জন্মদিন এলো ও প্রস্তাব করল বাইরে কোন রেস্তোরায় কয়েকজন বন্ধু বান্ধব সহ জন্মদিন উদযাপন করা যাক। আমি বললাম, তোমার বন্ধুদেরকে তোমার অ্যাপার্টমেন্টেই ডাকো এবং আমি তাদের জন্য খাবার রান্না করব। আমার এই প্রস্তাবটা সুজানার খুব পছন্দ হল। সে মতে সে তার বন্ধু-বান্ধবদেরকে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তার ফ্ল্যাটই আমন্ত্রণ জানালো। আমি আমার রান্নার সর্বোত্তম হূনর প্রয়োগ করার চেষ্টা করলাম। সৌভাগ্যক্রমে আমার রান্নাগুলো আমন্ত্রিত সব অতিথিদের পছন্দ হলো।

আমি অনুধাবন করলাম আসল ব্যাপারটা হল সবাই খাবারের রুচিতে একটু ব্যতিক্রম খোঁজে এবং খাবারটা যদি একেবারে অখাদ্য না হয় তবে ব্যতিক্রমটা সবাই উপভোগ করে। রাতারাতি আমি বাবুর্চি বনে গেলাম । এরপরে প্রায়ই সুজানার বন্ধু-বান্ধব আর আত্মীয় স্বজনের বাসা থেকে পারিবারিক অনুষ্ঠানের খাবার তৈরি করার জন্য ডাক পেতে থাকলাম। আামার রান্না করা একটু ভিন্ন স্বদের গ্রিক খাবার আমন্ত্রিত অতিথিদের প্রসংশা পেতে থাকল । আমার আত্মবিশ্বাস আর উৎসাহ বেড়ে গেল। রেস্তোরায় কাজ করার পূর্ব অভিজ্ঞতা এবং খাবার তৈরি করতে কিছুটা কল্পনা শক্তি প্রয়োগ করে ছোটখাটো সংযোজন (টুইস্ট) করে খাবারটাকে কে আরো একটু সুইডিশদের মত সুস্বাদু করার প্রচেষ্টার ফলাফল সবার মনে ধরল। কিছু কিছু প্রাক প্রণালী (Recipe) তৈরি করলাম গ্রিক আর সুইডিশ বন্ধন শৈলীর সংমিশ্রণে। এর প্রায় সবগুলোই জনপ্রিয় হলো। এভাবে আমি একজন জনপ্রিয় গ্রীক শেফ হয়ে উঠলাম।

এক পর্যায়ে আমার এবং সুজানার বন্ধুবান্ধব সবাই একটি গ্রিক রেস্তোরাঁ খোলার পরামর্শ দিল। আমরা দুজন ও তাই ভাবছিলাম। শুরু হলো জায়গা খোঁজা। আর ফল হল আজকের এই রেস্তোরাঁ যেখানে তোমরা বসে আছো।

আমি খুব আগ্রহের সঙ্গে আমার বন্ধু লেফতেরিস এর নৌ প্রকৌশলী থেকে সফল শেফে রুপান্তর (Transformation) এর কাহিনী শুনলাম। বাকি যে কদিন গোথেনবার্গে ছিলাম প্রতি সন্ধ্যা কাটিয়েছি ওদের রেস্তোরায়। ফেরার দিন ওদের বাণিজ্যের এবং ভালোবাসায় উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করে আবার জাহাজ নিয়ে সমুদ্রে ভাসলাম।

ছবিঃ আমার জাহাজ এম ভি ফেইরুজ ২, এগল্পের নায়ক এলেফতেরিস এবং আামি ৩. গ্রিক নাবিক বন্ধু মানলিস

Address


Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Mohona Mega Kitchen posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Mohona Mega Kitchen:

Videos

Shortcuts

  • Address
  • Telephone
  • Alerts
  • Contact The Business
  • Videos
  • Claim ownership or report listing
  • Want your business to be the top-listed Event Planning Service?

Share