18/11/2024
বাংলাদেশের সুপার মার্কেট বনাম আমেরিকান সুপার মার্কেট
১৯৮২ সালের দিকে একবার আমার জাহাজ এম ভি জেড থ্রি নিয়ে আমেরিকা এসেছিলাম। ছাপানো কোন কিছু দেখলেই আমি পড়ে ফেলতাম। সে সময় একটা আমেরিকান এক পত্রিকায় আমেরিকায় সুপার মার্কেট এবং হাইপার মার্কেট সম্পর্কে একটা চমৎকার তথ্যবহুল লেখা পড়েছিলাম।
বিষয়বস্তুটা অনেকটা এরকম, আমেরিকায় প্রথম যখন সুপার মার্কেট চালু হলো তখন সমাজবিজ্ঞানীরা এটার প্রতিবাদ করেছিলেন। তারা বলেছিলেন আমেরিকায় প্রচলিত গ্রসারি দোকানগুলো ( মুদি দোকান বলা যেতে পারে ) এবং তাদের গ্রাহক এলাকার লোকজনের মধ্যে এক ধরনের এক ধরনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি করে। গ্রসারি দোকানগুলো যেন এলাকার ক্লাব ঘর। এখানে লোকজন আসেন গল্প করেন কেনাকাটা করেন নগদে কখনোবা বকিতে। সুপারমার্কেট গুলো আমেরিকান সামাজিক প্যাটার্ন ধ্বংস করে দিচ্ছে কারণে গ্রসারি দোকান গুলো উঠে যাচ্ছে। সৃষ্টি হয়েছে এক অসম প্রতিযোগিতা। সুপার মার্কেট গুলো যে দামে পন্য সরবরাহ করতে পারে গ্রসারি দোকানগুলো কোনক্রমেই সেই দামে পন্য বেচতে পারে না। এর একটা কারণ হলো সুপার মার্কেটগুলোর বিশাল পুঁজি, অত্যন্ত কর্মক্ষম (efficient) ক্রয় ব্যবস্থাপনা, বিশাল বিক্রয় ব্যবস্থাপনা। এতে করে তারা পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় থেকে সব থেকে কম দামে সব থেকে ভালো পণ্যটি সংগ্রহ করতে পারে। অন্য দিকে একই পন্য গ্রসারি দোকানগুলোর হাতে আসে কয়েক হাত ঘুরে যাতে করে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। আর আরেকটা ব্যাপার আছে, সুপারমার্কেট গুলোর কেন্দ্রীয় ক্রয় ব্যবস্থাপনার জন্য একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ পন্য কিনতে পারে ফলে তারা উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে ভালো রকম ডিসকাউন্ট বা মূল্য রেয়াত এক পায়। যে সুযোগ গ্রসারি দোকানগুলো পায় না ।
এখন দেখা যাচ্ছে সুপার মার্কেটের কারণে আমেরিকান জাতি পৃথিবীর মধ্যে সবথেকে ভালো খাওয়া দাওয়া করে যাকে বলে Well fed nation । এরপরে আমেরিকায় এলো হাইপার মার্কেট এগুলো বেশিরভাগই শহরের বাইরে স্থাপিত, বিশাল পার্কিং এরিয়া থাকে এইসব মার্কেটে। হাইপার মার্কেট থেকে আমেরিকানরা ন্যায্য মূল্যে একবারে সপ্তাহের বাজার বা মাসের বাজার করে নিয়ে আসতে পারে।
আমাদের দেশে সুপারমার্কেট এগুলো এক ধরনের প্রতারণা করছে গ্রাহকদের সঙ্গে। এরা নিজের পুঁজি না খাটিয়ে বিভিন্ন সরবরাহকারীদের কাছ থেকে পণ্য কিনে মধ্য স্বত্ব ভোগীদের মাধ্যমে এবং এ পণ্য কেনে বাকিতে ফলে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। ভুগতে হয় ক্রেতা সাধারণকে। অথচ সুপার মার্কেটের ক্ষেত্রে এরকম হবার কথা ছিল না। এগুলো যেন হয়ে দাঁড়িয়েছে উদ্যোক্তাদের টাকা বানাবার কারখানা আর উচ্চবিত্তের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় আরামে বাজার করার জায়গা হিসাবে।
আমাদের দেশের সুপার মার্কেটগুলো যদি সরাসরি গ্রামের উৎপাদক বা গ্রামের মোকামগুলো থেকে, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ সরাসরি পণ্য কিনতেন নগদ টাকায় ( কারণ তারা পণ্য বিক্রয় করেন নগদ টাকায় ), আমদানিকৃত পণ্য সমূহ মধ্য স্বত্ব ভোগীদের কাছ থেকে না কিনে নিজেরাই যদি আমদানি করে সুলভ মূল্যে বিক্রি করতে পারতেন । কিন্তু জনসেবার পথে না যেয়ে কৈ এর তেলে কৈ ভাজার এক অনৈতিক ব্যবসার মাধ্যমে লোক ঠকাবার ব্যবসায় মেতেছেন আমাদের তথাকথিত সুপার মার্কেট গলো।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যাপারটা ভেবে দেখতে অনুরোধ করছি।