19/04/2022
আজ কিছু না বলে থাকতে পারলাম না।
অভিনয় শিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করার পর থেকে কাস্টিং এর কাজ টুকটাক শুরু করি।
কাস্টিং এর কাজ করতে গিয়ে দেখলাম মিডিয়া তে সারাদিন গাধার মতন খাটুনি খাটিয়ে ব্যাকগ্রাউন্ড আর্টিস্ট কিংবা নবাগত আর্টিস্ট দের অধিকাংশ পেমেন্টই মেরে দেয়া হয়।নয়তো এমন পেমেন্ট দেয়া হয়,যা আসলে বর্তমানে একজন লেবারের পেমেন্ট থেকেও কম।
একজন লেবার ৯-৯ টা কাজ করেও এখন ১০০০-১৫০০ এর নীচে কাজ করে না।সেখানে একটি চলচ্চিত্র বা নাটকের শিল্পী হিসেবে কাজ করাবেন, যেখানে কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। শুটিং এর কাজ রোলিং থেকে প্যাকআপ না হওয়া পর্যন্ত আর্টিস্ট রা যেতে পারেন না এবং কোনো কারণে শুটিং যদি শেষ হতে হতে রাত ২-৩টাও বেজে যায়, তাহলে তারা বাসায় কিভাবে যাবে। কিংবা তাদের রাস্তা ঘাটে কোনো সমস্যা হবে কিনা,তার কোনো নিশ্চয়তাও নেই। কোনো কারণে কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড বা নবাগত আর্টিস্ট দের রাস্তায় কোনো বিপদ হলে এর কোনো রেসপনসেবলিটিও ডিরেক্টর রা নেন না।
অথচ তাদের সারাদিন গাধার খাটুনি খাটিয়ে তাদের পেমেন্ট হয়ে থাকে ৫০০-১০০০ টাকা। তাও আবার তারা সবাই যদি এই পেমেন্ট টাও ঠিক মতো পেতো।তাহলেও বুঝ দেয়া যেতো।অধিকাংশ সময়ে দেখা যায় একটা প্রডাকশন হাউজে নবাগত আর্টিস্ট বা ব্যাকগ্রাউন্ডে যারা কাজ করে, তাদের পেমেন্ট মূল ডিরেক্টর দের কাছ থেকে কয়েক হাত ঘুরে তারপর কাস্টিং এজেন্সির হাতে আসে। ফলাফল সেই কাস্টিং এজেন্সি আর্টিস্ট দের পেমেন্ট না পারতে ৪০০-৮০০ টাকা দিয়ে থাকে।আবার অনেক কাস্টিং এজেন্সি ইদানীং টাকা কম পায় বলে, অনেক নবাগত আর্টিস্ট দের পেমেন্ট মেরেও দেয়।
একারণে এখন মিডিয়া তে ব্যাকগ্রাউন্ড আর্টিস্ট কিংবা নবাগত আর্টিস্ট দের সচরাচর পাওয়া যায় না।
এছাড়াও আরও একটা বিষয় ইদানীং দেখা যায়, ডিরেক্টর রা নবাগত আর্টিস্ট বা ব্যাকগ্রাউন্ড আর্টিস্ট খুজে থাকেন হাই কোয়ালিটি। কিন্তু পেমেন্ট দিবেন সেই ৫০০-১০০০ টাকা।
একারণে এখন এ লাইনে কিছু লেবার কন্ট্রাক্টর রা ঢুকেছে মৌসুমি বিজনেস করতে। এদের সচরাচর আগে কখনো দেখা যায়নি।তারা মৌসুমি বিজনেস করতে মিডিয়া তে অনেক নবাগত আর্টিস্ট দের ভুল ভাল বুঝিয়ে কাজ করাচ্ছে। কিন্তু সেই নবাগত আর্টিস্ট ২-৪টা কাজ করার পর, যখন সে বুঝতে পারে। মূলত ডিরেক্টর রা পেমেন্ট হয়তো তার বাবদ দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু সে যেই কাস্টিং এজেন্সি মাধ্যমে কাজে গিয়েছিল, সে তার পারিশ্রমিক মেরে দিয়েছে,কিংবা হয়তো ডিরেক্টর তার পেমেন্ট ধরা ছিল ১০০০ টাকা। সেই পেমেন্ট সে পেয়েছে ৪০০-৫০০ টাকা। তখন সে হয় নিজেই কাস্টিং এর কাজ শুরু করে দেয়, ডিরেক্টর দের হাত করে, নয়তো সে মিডিয়া লাইনে থাকা পাবলিক দের বাপ মা তুলে গালিগালাজ করে। পরবর্তী তে এদের কে আর কোনো শুটিং এ দেখা যায় না। কিন্তু দীর্ঘদিন পরে সাধারণ পাবলিক দের কাছ থেকে ডিরেক্টর রা শুনতে পায়,পাবলিক রা তাদের নিয়ে কটু কথা বলছেন, কারণ নবাগত আর্টিস্ট দের কাজ করান ঠিকই, কিন্তু পেমেন্ট দেননা।এটা না সাধারণ পাবলিক দের দোষ, না ওই নবাগত আর্টিস্ট দের দোষ। এটা সম্পূর্ণ ওই সকল মৌসুমি কাস্টিং এজেন্সি গুলোর দোষ, যারা মৌসুমি বিজনেস হিসেবে সেই নবাগত আর্টিস্ট দের দিয়ে কাজ করিয়ে, তাদের পেমেন্ট মেরে দিয়েছেন। কিংবা তাদের সঠিক পারিশ্রমিক দেননি।
একটা সিনেমা বা নাটকে কাজ করতে গেলে মডেল তার পারিশ্রমিক নিজে জানায়,তার যদি পারিশ্রমিক অনুযায়ী ডিরেক্টর দের পৌসায়,তবেই কাজ করে ওই মডেল। কিন্তু ব্যাকগ্রাউন্ড বা নবাগত আর্টিস্ট দের নির্দিষ্ট কোনো পারিশ্রমিক ব্যাকগ্রাউন্ড বা নবাগত আর্টিস্ট রা বলতে পারেন না। কারণ তাদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, এটাই অনেক। এমন চিন্তা ভাবনা করেন বর্তমান সময়ের প্রডিউসার ও ডিরেক্টর রা।
আর এতে করে বর্তমানে মিডিয়া তে কাজ যত ভালো আসুক না কেনো,ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ করার জন্য আর্টিস্ট খুজে পাওয়া যায় না।আবার যেটা মূলত মূল আর্টিস্ট দের পেমেন্ট হওয়া উচিত, সেটা না করে ব্যাকগ্রাউন্ড আর্টিস্ট দের পেমেন্ট দিয়ে মূল আর্টিস্ট দের কাজও করিয়ে নিচ্ছে, যা নিজের সামনে ঘটেছে।
বর্তমানে ব্যাকগ্রাউনড আর্টিস্ট রা
৮০০-২০০০ টাকার নীচে কেউ কাজ করতে আগ্রহী না।কিন্তু কিছু মৌসুমি কাস্টিং এজেন্সি গুলো প্রয়োজনে লেবারদের স্যুট পড়িয়ে ফিটফাট করে, ক্যামেরার সামনে দেখাচ্ছে তারা মডেল। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার পর শুটিং ইউনিট থেকে বের হওয়ার পর, সেই সব স্যুট বুট খুলে নিয়ে তাদের সেই পুরনো জামাকাপড় পড়িয়ে হাতে ৪০০-৫০০ টাকা বুঝিয়ে দিচ্ছে। ফলাফল মিডিয়া তে ডিরেক্টর রা মনে করেন,সে দিতে পারছে যেহেতু অন্য কাস্টিং এজেন্সি রা তা পারছেন না কেনো???
ডিরেক্টর দের বলবো।আপনার বাসার নীচে কেউ হয়তো ফুটপাতে বসে তরকারি বা মাছ বিক্রি করছে। কিংবা ফুটপাতে বসে ভিক্ষা করছে। কোনো কারণে তারপর দিন আপনার শুটিং এ গিয়ে ব্যাকগ্রাউন্ডে আর্টিস্ট হিসেবে তাদের কেই দেখতে পেলেন, যারা আপনার বাসার নীচে বসে তরকারি বিক্রি করছেন কিংবা ভিক্ষা করে, তারাই আপনার প্রডাকশনের কাজে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো। আপনি পেমেন্টও দিচ্ছেন এ গ্রেডের। কিন্তু তারা আসলে এ গ্রেডের মডেল হওয়া পসিবল কিনা,কি মনে হয়।
দেখা গেলো আপনার প্রডাকশন নাটক বা সিনেমা যখন রিলিজ হবে, তখন আপনার পাড়া প্রতিবেশী যখন দেখবেন আপনার ওই নাটক বা সিনেমা তে এলাকার তরকারিওয়ালা বা ভিক্ষা করে যে সে স্যুট বুট পড়ে কাজ করছে, তাও হয়তো নায়ক নায়িকার বন্ধু, বান্ধবী,বা যে রোলেই হোক।তখন আপনার ওই কাজ নিয়ে কি সম্মানের সহিত থাকতে পারবেন। কিংবা আপনি ট্রোলিং এর শিকার হবেন না যে তার কোনো নিশ্চয়তা আছে কি???
বর্তমানে সবকিছুর দাম আকাশছোয়া।যেখানে মানুষ প্রতিদিন একটা টেনশনে থাকে সে কিভাবে বাসা ভাড়া দিবে, কিভাবে সংসার চালাবে, কিভাবে নিজে চলবে। তখন কিছু মৌসুমি কাস্টিং এজেন্সি গুলো এই সেক্টর টাকে নষ্ট করে ফেলছেন।
যেখানে ডিরেক্টর রা প্রতি ব্যাকগ্রাউন্ড আর্টিস্ট দের পেমেন্ট দিচ্ছে - ১০০০ টাকা। সেখানে আপনি কাস্টিং এজেন্সি ১০০-২০০ টাকা কমিশন নিন।আপনি যদি মনে করেন আপনি অনেক দিন পরে একটা পার্টি পেয়েছেন, মোটা অংকের টাকা পাচ্ছেন।আর্টিস্ট দের গাধার খাটুনি খাটিয়ে তাদের একটা নূন্যতম পারিশ্রমিক ধরিয়ে দিলেন ব্যস হয়ে গেলো।কিংবা অনেক এর পেমেন্ট আজ দিচ্ছি কাল দিচ্ছি বলে তার পেমেন্ট মেরে দিলেন।কয়দিন ভাই।
আজ হয়তো আপনি ডিরেক্টর দের খুশি করালেন।ডিরেক্টর হয়তো ১০ জন চেয়েছে ১০ জনের জন্য জনপ্রতি-১০০০ টাকা দিলো।আপনি আর্টিস্ট দের ৫০০ টাকা করে দিলেন।অনেক কে আবার দিলেনও না।
দুদিন পর যদি ডিরেক্টর ১০০ লোক চেয়ে বসে, ততক্ষণে আর্টিস্ট দের কম পেমেন্ট বা টাকা মেরে দিয়েছেন বলে তারা সবখানে আপনাকে নিয়ে আপনি চিটার বাটপার বলে পোস্ট শেয়ার করে দিলো।তখন আপনি ১০০ লোক তো দুরের কথা ১ জন লোকও পাবেন।
যারা ইদানীং কালে মৌসুমি কাস্টিং এজেন্সি হিসেবে কাজ শুরু করেছেন কিংবা দীর্ঘদিন ধরে কাস্টিং এর কাজ করছেন, কিন্তু আর্টিস্ট দের পেমেন্ট মেরে দিয়ে কিংবা কম পেমেন্ট দিয়ে, তারা চিন্তা ভাবনা করে দেখবেন
আপনাদের মৌসুমি বিজনেস কয়দিন থাকবে।
এই পোস্ট কোনো একক কোনো প্রডাকশন হাউজ কিংবা ডিরেক্টর এর কারণে নয়।এটা সকল ডিরেক্টর ও মৌসুমি কাস্টিং এজেন্সি গুলো কে উদ্দেশ্য করে পোস্ট শেয়ার করা