25/02/2020
আমানত সুরক্ষা আইন ২০২০ নিয়ে কিছু কথাঃ
কোন ব্যাংক বন্ধ বা অবসায়িত হলে, ঐ ব্যাংকে গ্রাহকের যত হিসাবে যত টাকাই থাকুক, সর্বোচ্চ ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপুরণ পাবেন। এমন একটি চমকপ্রদ শিরোনাম সম্বলিত খবর সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়েছে। এটি অনেকের মাঝে বিভ্রান্তি ও ভয়ের সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে প্রবাসীদের মাঝে।
এবার আসুন জেনে নেই আসল ঘটনা। অবসায়ন বা বিলুপ্ত বলতে কি বোঝায়? কোন ব্যংক দেউলিয়া অর্থাৎ এর সম্পদের চেয়ে দায় বেশী হলে বা অন্য কোন কারনে এর কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়াই হলো অবসায়ন বা বিলুপ্ত করন। আর বিলোপ বা অবসায়নের একটি পদ্ধতি বা নিয়ম রয়েছে। মৌলিক বিষয় হলো কোন ব্যাংক বা কোম্পানি অবসায়নের ক্ষেত্রে প্রথমেই এর পাওনাদার বা ঋনদাতাদের দাবী পরিশোধ করতে হয়। আর আমরা জানি ব্যাংক যখন কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে আমানত হিসেবে অর্থ গ্রহণ করে, তখন তা ঐ ব্যাংকের দায় আর ঐ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের পাওনাদার বা ঋনদাতা। ফলে অবসায়নের বা বন্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে আমানতকারীদের পাওনা আগে পরিশোধ করতে হবে। তবে ব্যাংকের অবস্থা খারাপ হওয়ার কারনে সম্পূর্ণ পরিশোধ করতে না পারলে, আনুপাতিকহারে পরিশোধ করা হবে। যার ফলে সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত খবর "যত টাকাই থাকুক, সর্বোচ্চ ১লক্ষ টাকা পাওয়া যাবে" এটি ভিত্তিহীন ও এই আইনের অপব্যাখ্যা। না বুঝেই এমন প্রচারনা করা হচ্ছে।
যার আমানত বেশী থাকবে সে বেশী ফেরত পাবে, যার কম থাকবে সে কম পাবে। যার ৫ কোটি থাকবে সে, আর যার ৫ লক্ষ থাকবে, দুজনে সমান পাবেন না। আনুপাতিকহারে পাবেন।
তবে ব্যাংকের অবস্থা যদি একেবারে শোচনীয় হয়, অর্থাৎ এর সমস্ত সম্পদ বিক্রি করেও যদি কিছু না পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে গ্রাহককে আমানত সুরক্ষা তহবিল থেকে সর্বোচ্চ ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। তার মানে কি সবাই ১লক্ষ টাকা করে পাবে? অবশ্যই না। বলা হয়েছে সর্বোচ্চ ১ লক্ষ টাকা। আর এই টাকা কি ব্যাংক দিবে? না, ব্যাংক দিবে না। আমানত সুরক্ষা তহবিল থেকে দেয়া হবে।
এবার দেখা যাক ইতিহাস কি বলে; বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত কোন ব্যাংক অবসায়ন বা বিলুপ্তকরনের ঘটনা ঘটেনি। কয়েকটি ব্যাংকের খারাপ অবস্থা হওয়ায় রি-ফর্ম হয়েছে। কিন্তু অবসায়ন বা বিলুপ্ত হয়নি।
যেখানে এখনো পর্যন্ত কোন ব্যাংক বিলুপ্ত বা অবসায়নই হয়নি, সেখানে ক্ষতিপুরনের প্রশ্ন আসে কিভাবে? অবসায়ন হলে তো ক্ষতিপূরণের ব্যাপার আসবে। আমরা সব ব্যাপারে নেতিবাচক ভাবতে ভাবতে ইতিবাচক শব্দ বা ভাবনাটাই ভুলে গেছি।
তাছাড়া, ব্যাংকগুলো তাদের গৃহীত আমানতের একটি বিশেষ অংশ তারল্য আকারে সংরক্ষণ করে ও মুনাফার একটি বড় অংশ সঞ্চিতি বা প্রভিশন আকারে সংরক্ষণ করে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়টি খুব গুরুত্ব সহকারে মনিটর ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ফলে ব্যাংকগুলোর বিলুপ্ত বা অবসায়ন হওয়ার মত শোচনীয় অবস্থা আসার সম্ভাবনা নাই বললেই চলে।
খুব সহজে বলা যায়, মারা গেলেই কেবল কবর দেওয়ার বিষয় আসে। মারা না গেলে কবর দেওয়ার কি আছে? তাই, অবসায়ন হলেই ক্ষতিপুরণের বিষয় থাকে। অবসায়ন না হলে ক্ষতিপূরণের কি আছে?
আমরা এতটা নিশ্চিত কিভাবে যে বাংলাদেশের সব ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে বিলুপ্ত হয়ে যাবে? কেউ একথা কোন তথ্য বা যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে পারবে? অবশ্যই পারবে না। অযথা কিছু না বুঝে বিভ্রান্তি ছড়ানো কিছু লোকের নেশা হয়ে গেছে।
এসব গুজবে কান দিয়ে বা বিভ্রান্ত হয়ে ব্যাংক থেকে টাকা সরিয়ে বাসায় রেখে ডাকাতির রাস্তা সুগম করবেন না বা আজে-বাজে জায়গায় বিনিয়োগ করে আপনার সারাজীবনের সঞ্চয় নষ্ট করবেন না। ব্যাংকেই আপনার টাকা সবচেয়ে বেশি নিরাপদ।
তবে কিছু কিছু ব্যাংকের অবস্থা কিছুটা খারাপ যাচ্ছে। যেগুলো আপনারা সংবাদপত্রসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম থেকে অথবা অন্য কোনভাবে জেনে নিবেন। সব ব্যাংকের অবস্থা খারাপ নয়।বাংলাদেশের অধিকাংশ ব্যাংকের অবস্থা বেশ ভাল।
যদি পরামর্শ চাওয়া হয়, তাহলে এই অবস্থায় আপনারা কি করবেন? আমি এতটুকুই বলবো, একান্তই যদি আপনার আশঙ্কা হয়, আপনার টাকা মাইর যাবে বা খোয়া যেতে পারে, তাহলে বিভিন্ন ব্যাংক সম্পর্কে খোজ-খবর নিন। যাচাই-বাছাই করে যে ব্যাংকের অবস্থা ভাল, সে ব্যাংকেই আপনার টাকা রাখুন।
না বুঝে ভয় পাবেন না বা বিভ্রান্ত হবেন না।
জানুন, বুঝুন, চিন্তামুক্ত থাকুন।
ভাল থাকুন আপনি, ভাল থাকুক আপনার সঞ্চয়।
(সংগৃহীত)