26/03/2022
Collected Post:
CC: Muhaiminul Haque
বাংলাদেশ রেলওয়ে আর সহজ কি টিকেট ব্যবস্থা কে নতুন করে সাজাতে সফল নাকি ব্যর্থ সেটা কি এখনই বলার সময় কি এসেছে? অনলাইনে টিকেট কিনতে না পেরে যারা রাগের চোটে বিভিন্ন গ্রুপে ঝাল ঝাড়ছেন তাদের জন্য আমার এই লেখাটা।
গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় সহজ বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য নতুন সিস্টেমে টিকেট দেয়া শুরু করেছে। ১৫ বছর পরে বাংলাদেশ রেলওয়ে কেন নতুন প্রতিষ্ঠানের সাথে যাত্রা করল তার পেছনের কাহিনীটা সীমাহীন দূর্ণীতি, অনিয়ম, কেলেংকারী আর জনগণের সম্পদ নিয়ে বিশাল চক্রান্তের থেকে বেরিয়ে আসার একটা বেপরোয়া প্রয়াসের।
গত ২৩ তারিখের জনকন্ঠতে আসা একটা রিপোর্ট আমার নজরে পরে। ১৫ বছর ধরে রেলের টিকেট সিস্টেম দেখত CNS BD নামের একটা কোম্পানি, তারা সহজের কাছে তাদের ডাটা আর সফটওয়্যার হস্তান্তর করার কথা ছিল যেটাতে CNS একেবারে আনপ্রোফেশনালের মত কিছুই হ্যান্ডওভার করেনি। নাম কা ওয়াস্তে একটা সিডি হস্তান্তর হচ্ছে দেখে তখনই বুঝেছিলাম বিশাল একটা ঝামেলা আসতে যাচ্ছে। অজস্র অনিয়ম আর গ্রাহক ভোগান্তির হোতা CNS বছরের পর বছর রেলের উপর সিন্দাবাদের ভূত হয়ে দূর্নীতি করে গেছে। নতুন রেলপথ মন্ত্রী যখন নতুন টেন্ডার ডাকলেন তারা হাইকোর্টে যেয়ে হলেও সেই টেন্ডার ঠেকানোর চেষ্টা করেছে। রেলমন্ত্রীর বক্তব্য টিভিতে এসেছে যে কিভাবে CNS ব্ল্যাকমেইলের ব্যাপক চেষ্টা করেছে। তারপরেও Shohoz JV সেই টেন্ডার জিতেছে, আর রেল ভেবেছে যাক সিন্দাবাদের ভূত বুঝি নামল।
কিন্ত ঘটনা আরও বাকি। নেপোলিয়নিক যুদ্ধের সময় রাশিয়াতে একটা টেকনিক ছিল যুদ্ধে হেরে গেলে নিজের ঘরবাড়ি আর খাবারের গুদাম সবকিছু নষ্ট করে রেখে যেত যাতে প্রতিপক্ষ কিছু না পায় এসে। CNS ঠিক তাই করেছে টেন্ডার হারার পরে।
সহজ এর জন্য CNS কে রিপ্লেস করার জন্য সময় দেয়া হলো মাত্র ২১ দিন। আর সেটা কিন্ত শুধু সাইট বানানো না, একেবারে রেলওয়ের স্টেশন থেকে শুরু করে অনলাইন, ট্রেনিং সবকিছু। যারা টেকনিকাল বিষয়ে জ্ঞান রাখেন তারা জানেন ২১ দিনে এরকম ম্যামথ লেভেলের দায়ীত্ব নেয়া সোজা কথায় সুইসাইডাল। যেখানে CNS আগের ১৫ বছরের বিশাল পরিমাণ ডাটা, সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার কোনটাই সহজ কে হ্যান্ডওভার করেনাই সেখানে ২১ দিনে সহজ কিভাবে গতকাল সন্ধ্যায় ট্রেনিং শেষ করে অফলাইনে টিকেট বিক্রি শুরু করল ৭৭টা স্টেশনে সেটা ডেভেলপার জগতের মিরাকল বলব। দুনিয়ার কোন কোম্পানি এইটা করতেই চাইত না, কিন্ত সহজ শুধু করসে মানে একেবারে চালুই করে ফেলসে। দুনিয়ার আর কোন কোম্পানি এমনকি CNS নিজেও এত অল্প সময়ে করতে পারত না। তার প্রমাণ হলো তারা যখন শুরু করে, তারা ৬ মাস সময় পাইসিলো আগের সিস্টেম থেকে নতুন সিস্টেমে কাজ করার জন্য। তবে এটা কিন্ত সাময়িক সিস্টেম। যেটার কারণে আগের পুরাতণ সিস্টেমের উপরে ভরসা করে অনলাইনেও আপাতত সহজ টিকেটিং চালু করসে। আর পুরাতন সিস্টেম স্বাভাবিকভাবেই আমাদের চাহিদার চাপে নাই হয়ে গেসে।
কিন্ত এটার দায় কি সহজের? এখন যে সিস্টেমে টিকেট কেনা চলতেসে সেটা সাময়িক। টেন্ডারের প্রমিসড ভার্সন আসবে রেলের সাথে চুক্তি অনুযায়ী ১৮ মাস পরে। তাই সকাল ৮টা থেকে রেলের সাইটের ভোগান্তির খবরে আমি আশ্চর্য্য হইনাই। CNS তার চক্রান্তে সফল হয়েছে সাময়িকভাবে। সাইবার হামলা হচ্ছে কিনা সেটাও দেখবার বিষয়।
রেলস্টেশনে সফলভাবে সহজ টিকেট সিস্টেম দ্রুতগতির সাথে চালু করাটা একটা ভালো ইংগিত। তাদের তারমানে অল্প সময়ে ভাল কাজ দেখানোর সক্ষমতা আছে। আমরা যদি ধৈর্য্য ধরতে পারি তবেই এই অনন্তকাল ধরে চলে আসা CNS এর ব্ল্যাকমেইলিং এর ভূত ঘাড় থেকে চিরতরে নামায়ে ফেলতে পারব। টেন্ডার চুক্তি অনুযায়ী সহজ ১৮ মাস পরে নিজেদের সিস্টেমে যখন কাজ শুরু করবে , তখন আসলে পুরা অবস্থাটা বুঝতে পারা যাবে। জিনিসটা ছেলের হাতের মোয়া না যে একরাতে বানায়ে ফেললাম। তাই যারা সহজকে এখনই বাদ দেয়ার কথা বলতেসেন তাদের বলব ভাই আগে বুঝেন তারপর কথা বলেন।
সহজ আংশিকভাবে সফল স্টেশনগুলোতে ভালোভাবে শুরু করতে পারায়। এ প্লাস পেয়ে পাশ করবে কিনা সেটা সময় বলে দিবে। তাই যারা আসলে টেকনিকাল ব্যপারটা বোঝেননা তাদের অনুরোধ করব একটু ঘটনাগুলো জেনে নেন, তাহলে প্রকৃত কালো বিড়ালটা কে সেটা ধরতে পারবেন।