10/12/2023
ডিসেম্বরের নানাবাড়ি সফর বড্ড মিস্ করি।
ডিসেম্বরে বার্ষিক পরীক্ষা শেষে, আম্মা আমাদের চার ভাই বোনকে নিয়ে একসাথে নানাবাড়ি যেতেন।
-নানাবাড়ি প্রায় ছয় ঘন্টার রাস্তা ,তাও আবার নৌকায় যেতে হতো।( গাড়ি চলাচল শুরু হয় গত ৫ বছর আগে থেকে)
দীর্ঘ কুশিয়ারা নদীতে ছয় ঘন্টার জার্নি শেষে যখন নৌকা থেকে নামতাম , নামার ২০-৩০ মিনিট জুড়ে নৌকার ইঞ্জিনের সেই শব্দ তখনই কানে বাজতো।
-আমার সাত মামা
সাত মামার মধ্যে তিনজন নদীর পাড়ে এসে বসে থাকতেন আমাদের রিসিভ করতে। সাথে থাকতো ঠেলাগাড়ি ।
- আমাদের সাথে থাকা লাগেজ , আর আমি উঠতাম ঠেলাগাড়িতে। মামা নিয়ে যেতেন নদীর পাড় থেকে বাড়িতে ।
- আমার মেজো খালার সাথে আমার আম্মার প্রায় কম্পিটিশন হতো ,কে আগে পৌঁছুতে পারে বাপের বাড়ি।এই কম্পিটিশনে বরাবর আমরাই জিততাম।( প্রতিবছর একই দিনে মেজো খালাও আসতেন নানাবাড়িতে)
-নানী ,বাড়ির রাস্তায় বসে আছেন , কখন আসবো আমরা।
আসার সাথে সাথেই পুরো বাড়ি হৈ হুল্লোড়ে গরম হয়ে যেত।
- নানা ,গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ ,বেশি কথা বলা পছন্দ করেন না। আমি গিয়ে একটা লম্বা করে সালাম দিতাম , সালামের উত্তর দিয়ে শুধু একটা মুচকি হাসতেন ।
- নানী প্রতিবার নিজের পালিত মুরগীটি জবাই করে খাওয়াতেন।
- বিকালে নানার সাথে হাটে যেতাম,কিনে আনতেন আমাদের পছন্দের মাছ।
- দীর্ঘ ৩-৪ দিন নানাবাড়ি সফর শেষে যখন বাড়িতে যাওয়ায় ডাক পড়তো, কেমন যেন কষ্ট লাগতো , খুব বেশি কষ্ট পেতাম যখন বাড়িতে যাওয়ার জন্য আবার নদীর পাড়ে নৌকায় বসে আছি, এমন সময় ইঞ্জিন আবার চালু হলো আরো ৬ ঘন্টার রাস্তা । মাঝি নৌকা ছেড়ে দিচ্ছে , ইঞ্জিনের পাখার তৈরী পানিতে বুদ বুদ ফেনাটা দেখে মনে হতো পৃথিবীর সব কষ্ট প্রকাশিত হয় পানির বুদ বুদ তরঙ্গে।
-নদীর পাড়ে নানী বসে কান্না করতেন , আর দিন গুনতেন আরো একটি ডিসেম্বরের।
সৃতি কথা ডিসেম্বর