30/05/2023
উচ্চমাধ্যমিকের মেধা তালিকার ভাইবোনদের সাক্ষাৎকার দৃশ্যতই রাজ্যের ভাতঘুম ঠাস করে চড় মেরে ভাঙিয়ে দিয়েছে। এই প্রজন্ম (সিংহভাগ) এই ভাষাতেই কথা বলে। আমরা গুরুজন বলে সম্মান দিই না, যোগ্য হলে দিই। আমরা বলি, সম্মান চাইলে অর্জন করে নিন। যার তার সামনে মাথা নোয়াই না, যোগ্য ব্যক্তিকে সাষ্টাঙ্গ প্রণামেও আমাদের দ্বিধা নেই। আমরা সেই শিশুর প্রতিচ্ছবি, যারা লক্ষাধিক চাটুকারের মধ্যে নির্ভয়ে চেঁচিয়ে বলে, "রাজা তোর কাপড় কোথায়?"
মেধা তালিকার এক বোন বুক চিতিয়ে জানিয়েছে, এই দুর্নীতির রাজ্য তার রাজ্য নয়! আমরাও রোজ বলি, যেখানে শিক্ষক পেটাচ্ছে ছাত্রনেতা, ন্যায্য হকের দাবিতে শিক্ষকেরা মার খাচ্ছেন, অনুদান-কে ঠুলি পরিয়ে উন্নয়ন বলে দেখানো হচ্ছে, চাকরি চাইলে চপ সিঙ্গারা, কাশফুলের বালিশ বাঁধতে বলা হয়, ধর্ষকদের ছোট ছেলে, ধর্ষণকে সাজানো ঘটনা বলা হয়, চোরদের বুক দিয়ে আগলানো হয় এবং ভোটের খাতিরে ধর্ম নিয়ে নোংরা রাজনীতি হয় (আর টানলাম না...) - সে রাজ্য কখনো আমার রাজ্য হতেই পারে না! মুখ্যমন্ত্রী এদের আমটা কলাটা দিয়ে শিরদাঁড়া কিনতে পারবেন ভাবছেন? শিক্ষা অন্ধচক্ষু খুলে দেয়। তাই কি পাঠ্যক্রমের মান কমিয়ে, নানা শিক্ষা-পরিপন্থী নীতি নিয়ে শিক্ষা নামক বটগাছটার মূলে আঘাত করতে চাইছেন? আপনি ওই লাইনটা বিশ্বাস করেন নাকি? " ওরা যত বেশি পড়ে, তত বেশি জানে, তত কম মানে"...
এরা চোখে চোখ রেখে বলেছে প্রথাগত ভালো ছেলের পিওর সায়েন্স ছাড়া, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়া ছাড়াও গতি আছে। প্রথম হওয়া ছেলেটি অর্থনীতিবিদ হতে চায়। নিজের কৃতিত্বের প্রথম দাবিদার নিজেকেই বলে। আমরা অতিরিক্ত বিনয় জানি না। পা-চাটা সাংবাদিকদের দীর্ঘ দশকে প্রশ্নবিচিত্রা না পাল্টালেও আমাদের উত্তর পালটে গিয়েছে স্যার!
প্রেরণা মেধা তালিকায় আছে অথচ ও ইংরেজি নিয়ে পড়তে চায়। লেখালেখি করতে চায়। বাংলা, ইংরেজি আবার কেউ পড়তে যায়? ওটা তো কিছু না পেয়ে তবে নিতে হয়, তাই না? এসবে কিছু হয়? জানি না.. প্রেরণা কয়েক বছর পরে হয়ত হাতে ঝামা নিয়ে আসবে। আমরা দর্শকাসনে বসে হাততালি দিয়ে কতগুলো কালোমুখ দেখব, সাগ্রহে।
আবু মুখের উপর বলেছে, সে জানাতে চায় না সে কী হতে চায়। শুভ্রাংশু বলেছে সহায়িকা সে পছন্দ করে না। আশা করি, ওদের ছায়া, মায়া, কায়া কেউ মডেল করে মিথ্যে বলাতে পারবে না। স্মরণ্যা রূপান্তরিতা। একাদশ শ্রেণীতেই সে স্বেচ্ছায় পুরুষ থেকে নারী হয়েছে। তাকে ১০০% সমর্থন করেছেন তার বাবা-মা, শিক্ষক, বন্ধুরা। সে জানিয়েছে, তার মুখের উপর তাকে অপমান করার সাহস কারো নেই। কারণ কীভাবে উত্তর দিতে হয় সে জানে।
এই প্রজন্ম আসলে মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখেছে। করোনার ভয়ে অর্ধন্মৃত একটা সমাজ থেকে ফিনিক্সের মত উঠে আসা একটা প্রজন্ম। এরা প্রতিটা দিন শেষ দিনের মত বাঁচতে জানে। এরা ছকভাঙা, আগল ছাড়া। এরা তর্ক করে, প্রশ্ন করে, উত্তর চায়, উত্তর দিতে জানে। অকারণ বিনয়ে হেঁদিয়ে মরে না, সংস্কার মানে, কুসংস্কার মানে না।
আমরাই নবীন, আমরাই কাঁচা, আধমরাদের ঘা দিয়ে আমরাই বাঁচাই।