22/07/2020
যিলহজ্জ মাসের আমলঃ
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত আছেঃ
এক যুবকের অভ্যাস ছিল, যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখা গেলেই সে রোযা রাখা শুরু করিত। রাসূলে পাক (সাঃ) যুবকের এই ঘটনা জানিতে পারিয়া একদা ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, হে যুবক! এই দিনগুলোতে তোমার রোযা রাখার কারন কি? সে আরজ করিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার পিতা-মাতা আপনার উপর কোরবান হউক-এই দিনগুলো পবিত্র হজ্জের প্রতীক এবং হজ্জ আদায়ের মোবারক সময়-হজ্জ আদায়কারীগণের সাথে আমিও নেক আমলে শরীক হই, এই আশায় যে, তাহাদের সাথে আমার দু'আও আল্লাহতায়ালা কবুল করিয়া নিবেন। অতঃপর রাসূলে করীম (সাঃ) এরশাদ করিলেন, তোমার এক একটি রোযার বিনিময়ে একশত গোলাম আযাদ করার, একশত উট আল্লাহর রাস্তায় দান করার এবং জেহাদের সাজ সামানে ভরপুর একশত ঘোড়া দেওয়ার ছওয়াব রহিয়াছে, তন্মধ্যে ৮ই যিলহজ্জ (ইয়াওমত-তারবিয়া) এর রোযার বিনিময়ে এক হাজার গোলাম আযাদ করার, এক হাজার উট দান করার এবং সাজ সামানাসহ জিহাদের জন্য এক হাজার ঘোড়া দান করার সমতুল্য ছওয়াব রহিয়াছে, আবার ৯ই যিলহজ্জ (ইয়াওমুল-আরাফা) এর রোযার বিনিময়ে দুই হাজার গোলাম আযাদ করার, দুই হাজার উট দান করার ও জিহাদের সাজ সামানাসহ দুই হাজার ঘোড়া দান করার ছওয়াব রহিয়াছে।
চন্দ্র মাসের শেষ মাস যিলহজ্জ মাস। পবিত্র হজ্ব ও কোরবানীর কারনে এই মাসের গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহ বলেন, (ওয়াল ফাজর, ওয়া লায়ালিন আশর) "ফজরের শপথ! দশরাত্রির শপথ।" মুফাসসিরগন বলেন, দশরাত বলতে আল্লাহ সুবনাহু ওয়া তায়ালা যিলহজ্জের দশরাত্রিকে বুঝিয়েছেন। নবীজি ﷺ এরশাদ করেন, 'যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশদিনের আমল অন্যান্য দিনের আমলের তুলমায় উত্তম। সাহাবিরা আরজ করলেন, জিহাদ থেকেও উত্তম? নবীজি ﷺ এরশাদ করলেন,হ্যা, জিহাদ থেকেও। তবে সে ব্যক্তির থেকে নয় যে নিজের জান ও মালের ঝুঁকি নিয়েও জিহাদ করে কিছুই নিয়ে ফিরে আসেনা অর্থাৎ শাহাদাত বরণ করে।' (সহিহ বোখারী)
এ মাসের বিশেষ আমল-
১. দিনে রোযা পালন ও রাতে তাহাজ্জুদঃ
নবীজি ﷺ এরশাদ করেন, 'যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশদিনের ইবাদতের চেয়ে আল্লাহর কাছে অন্য কোন ইবাদত অতি প্রিয় নয়। এ দিন গুলোতে রোযা রাখলে পুরো বছর রোযা রাখার সমান সওয়াব পাওয়া যায় এবং রাতগুলোতে তাহাজ্জুদ আদায় করলে লাইলাতুল কদরে তাহাজ্জুদ আদায় করার সওয়াব পাওয়া যায়।' (জামে আত তিরমিজি)। উল্লেখ্য যে, এখানে যিলহজ্জের প্রথম দশদিন রোযা রাখা বলতে প্রথম নয়দিন উদ্যেশ্য। কেননা, যিলহজ্জের দশ তারিখ কোরবানী দিন। সেদিন রোযা রাখা হারাম।
২. আরাফার দিনে রোজাঃ
জিলহজ্জের ৯ তারিখ হল আরাফার দিন। এ দিনে নফল রোজা রাখা বিশেষ সুন্নত আমল। তবে আরাফায় উপস্থিত হাজীদের জন্য এই রোজা প্রযোজ্য নয়। নবীজি ﷺ এরশাদ করেন, ‘আরাফার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আশাবাদী যে আল্লাহ তায়ালা তার (রোজাদারের) বিগত এক বছরের ও সামনের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন। (সহিহ মুসলিম)
৩. তাকবির পাঠঃ
আল্লাহ বলেন, 'তোমরা নির্দিষ্ট কয়েকদিন বেশী করে আল্লাহর যিকির কর।' (সুরা বাকারা, আয়াতঃ ২০৩)। অত্র আয়াতের নির্দিষ্ট দিন বলতে যিলহজ্জের ৯ থেকে ১৩ তারিখ উদ্যেশ্য। এদিন গুলোকে আইয়্যামে তাশরিক বলা হয়। যিলহজ্জের ৯ তারিখ ফজর হতে যিলহজ্জের ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত প্রতি ওয়াক্তের ফরজ নামাজের পড় নিম্নোক্ত তাকবিরটি পাঠ করতে হবে এবং পাঠ করতে ভুলে গেলে যখন স্মরণ হবে তখনই পাঠ করে নিবে।
তাকবীরঃ আল্লাহ আকবার,আল্লাহু আকবার, লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার,আল্লাহু আকবার,ওয়া লিল্লাহিল হামদ। অর্থাৎঃ আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান এবং সকল প্রসংশা তার জন্যই।
এছাড়াও দান-সদকাহ, কোরআন তিলাওয়াত, বেশি বেশি দুরুদ শরীফ পাঠ, বিভিন্ন তাসবিহ পাঠসহ অন্যান্য নফল এবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে যিলহজ্জের প্রথম দশদিন অতিবাহিত করা অতিব উত্তম কাজ।
বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) বলেন, যে ব্যক্তি যিলহজ্জের প্রথম দশদিনকে সম্মান করবে আল্লাহ তাকে দশটি বস্তু দান করবেন। ১. হায়াতের বরকত ২. সম্পদে বরকত ৩. পরিবার পরিজনের হেফাজত ৪. গুনাহের কাফফারা ৫. নেক আমল বৃদ্ধি ৬. মৃত্যুকালীন সাকারাত সহজ ৭. অন্ধকারে আলো ৮. মীজানে নেকির পাল্লা ভারী ৯. দোযখ থেকে নাজাত ১০. জান্নাতে উঁচু মর্যাদা লাভ। (গুনিয়াতুত তালেবীন)