24/06/2024
সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে যেভাবে আমি হয়ে গেলাম মাওঃ সাদ সাহেবের বিরোধী।
#তখন ২০১৭ সাল, আবুধাবি মার্কাজে ফজরের বয়ানের পর নাস্তা খেয়ে বসে আছি, এর মধ্যে এক সাথি বলল, এবারের বিশ্ব ইজতেমায় মাওঃ সাদ সাহেবকে আসতে দেওয়া হবে না, তার কাছে কারণ জানতে চাইলে বলল যে, বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের অনেক আলেম তার বয়ানের মধ্যে ভূল পেয়েছেন যে, তিনি বলেছেন হেদায়েত আল্লাহর হাতে নাই, তিনি নবীদের শানে ভুল ধরেছেন, আরো অনেক অনেক ভুল বয়ান করেছেন। আমিতো নাউজুবিল্লাহ বলে ডিরেক্ট সিধা হয়ে বসে গেলাম, সে বলল সবগুলা বয়ানের রেকর্ড আছে, এবং দেওবন্দ তাকে রুজু করতে বলেছে কিন্তু সে রুজু করেনি। আমিতো কোপা শামসুর মত ক্ষেপে গেলাম যে, সাদ আবার কোন ফেরকা তৈরী করতেছে!!
তখন মেসেঞ্জারে একজনের সাথে বিষয়টা নিয়ে কথা বললাম সে বলল হাঁ কথা সত্য, তখন সে আমাকে হেদায়েত আল্লাহর হাতে নাই এর অডিও ক্লিপটা দিলো, শুনলাম, দেখলাম সত্যি অডিওতে বলতেছে " হেদায়েত যদি আল্লাহর হাতে হইত তাহলে নবী কেন পঠাইল?? অডিওটা এতোটুকই ছিল, আমিতো শুনে এস্তেগফার পড়া শুরু করলাম আর চিন্তা করতে লাগলাম সাদ সাহেব এইটা কি বলল! এরমধ্যে ফেইসবুক জুরে সুধু পোস্ট আর পোস্ট যে মাওঃ সাদ সাহেবকে দেওবন্দ গোমড়াহ বলেছে, এবং তাকে আহালে ছুন্নাত ওয়াল জামাত থেকে খরিজ করা হয়েছে! এরকম অনেক অনেক পোস্ট পড়ে সাদ সাহেবের প্রতি একরকম ঘৃণ্য সৃষ্টি হল।
আমি হয়ে গেলাম মাওঃ সাদ বিরোধী
এরপর আরেক জনে পোস্ট করলো ""মাওঃ সাদ সাহেবের ২৭টা মারাত্বক ভুল বয়ান" পোস্টা পড়ে এক যায়গায় এসে থমকে দাড়ালাম সেখানে লিখলো সাদ সাহেব আসহাবে কাহাফের কুকুরকে মনগড়া তাফসির করে বলেছেন সেটা কুকুর ছিলনা বাঘ ছিল। এখনে এসে চিন্তা করলাম যে এইটাতো সাদ সাহেব ঠিকই বলেছেন, আমরাও যখন তাফসীর পড়েছি তখন আল্লামা আইনি রহঃ এর তাফসিরের রেফারেন্স দিয়ে বলাছিল যে আসহাবে কাহাফের সেটা বাঘও হইতে পারে। প্রমান স্বরুপ আবুলাহাবের একটা ঘটনা বর্ণা করা হয়েছিল। আল্লাহর রাসুল সঃ দোয়া করেছিলেন আল্লাহপাক আপনি আবু লাহাবের দুই পুত্রের পিছে জমিনের কুকুর থেকে একটি কুকুর লাগিয়ে দিন, কিন্ত রাতের বেলা কুকুর না এসে বাঘ এসে তার ছেলেকে খেয়ে ফেলে। অথচ রাসুল সঃ দোয়া করেছেন কুকুর আসার জন্য, আল্লামা আইনি রহঃ বলেন সেহেতু কুকুরের যায়গায় বাঘ এসেছে তাহলে আসহাবে কাহাফের এখানেও কুকুরে যায়গায় বাঘ হইতে পারে।
এরই মধ্যে শুনলাম পাকিস্তান শুরা ঘটন করেছে এবং সেখানে মাওঃ সাদ সাহেবকেও রেখেছে, তখন আমি চিন্তা করলাম যেই লোকটা গোমড়া হয়ে গেছে বলে ফতোয়া দিতেছে তাকে আবার শুরাতেও কিভাবে রাখলো!? আবার বলতেছে তুমি আমিরের পদ ছারো, না হয়ত তোমার উপর আরো ফতোয়া আসবে! আবার বলতেছে শুধু রুজু করলেই হবে না, তোমাকে শুরাও মানতে হব, আমি একটু অবাক হলাম যে, একটা লোক গোমড়াহ হয়ে গেছে আবার আমিরের পদ ছারলে তার উপর থেকে গোমড়ার ফতোয়া উঠে যাবে! শুরা মানলে তার রুজু কবুল করা হবে, আমার মনে তখন সন্দেহের দানা বাধতে লাগলে, কারন এমনিতেই পাকিস্তান অনেক আগে থেকেই তাদের রাইবেন্ড মার্কাজকে বিশ্ব মার্কাজ করার পায়তারা করতেছিল। এছারা পাকিস্তান কখনো বাংলাদেশের মাশোয়ারা মান্তো না, তারা তাদের রোখ পাকিস্তান থেকে নিয়ে আসতো। যেইটা আমার নিজ চোখে আমি দেখেছি।
শুরু করে দিলাম মাওঃ সাদ সাহেবের বয়ানের তাহকিক বা পর্যালোচনা
আমি যেহেতু মাওঃ সাদ বিরোধী তাই যারা মাওঃ সাদ বিরোধী তাদের কাছেই ভুল বয়ানের অডিওগুলা খুঝতাম, তারা শুধু কাটপিছ বয়ানগুলাই দিতো, এতে আমার মন ভরতো না, একদিন এক এতেয়াতের ভাই একটা পোস্ট দিল যে, মাওঃ সাদ সাহেব হেদায়েত আল্লাহর হাতে নাই এভাবে বলেন নি, তিনি পুরা বয়ানটা তরজুমা লিখে বললেন মাওঃ সাদ সাহেব এই ভাবে বলেছেন,, তো আমি তার কাছে থেকে অডিও বয়ানটা শুনে পুরাটাই অবাক হয়ে গেলাম!! যে মানুষ স্বার্থের জন্য একজন ব্যাক্তির বিরুদ্ধে এরকম ভাবে কিভাবে মিথ্যা রটায়!?
মাওঃ সাদ সাহেব এর বয়ানটা এমন ছিল, হে আলেম ওলামাগন আপনারা যে বলতেছেন কাওকে ঈমানের আমলের দাওয়াত দেওয়ার প্রয়োজন নাই, যার কপালে হেদায়েত আছে সে হেদায়াত পেয়ে যাবে তাহলে নবীরা কালেমার দায়াতের জন্য দুনিয়াতে এত কষ্ট কেন করেছেন? কাফেরদের এতো অত্যাচার কেন সহ্য করেছেন? মাওঃ সাদ সাহেবে প্রশ্ন করে বললেন হেদায়েত যদি আল্লাহর হাতে হইত তাহলে আল্লাহপাক ঈমানের দাওয়াত দিতে দুনিয়াতে এত নবী রাসুল কেন পাঠাইলেন? আল্লাহপাক নবী রাসুল ছারাই সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দিতেন, এইভাবে আরো কিছু কথা বলে তিনবার বললেন হেদায়েত আল্লাহর হাতে,হেদায়েত আল্লাহর হাতে, হেদায়েত আল্লাহর হাতে, কিন্তু নবীদের মত দাওয়াতের মেহনত করে করে এই হেদায়েতের বানী সবাইর কাছে পৌছে দেওয়া আলেম ওলামাদের জিম্মাদারি। হেদায়েত আল্লাহর হাতে বলে বসে থাকলে হবে না, নবীদের মত দাওয়াত দিতে হবে।
বয়ানটা শুনেতো আমি অবাক! আফসোস করে বললাম যে, হযরতজী মাওঃ সাদ সাহেব বললেন কি আর হিংসায় জর্জরিত আলেমরা কাটপিচ করে প্রচার করলো কি!? "আগে পিছে সব কাট ছাট করে প্রচার করলো হেদায়েত আল্লাহর হাতে নাই!!" কি জগন্য অপবাদ!! এদিকে আমার রাহবার মুফতি আতাউররহমান (রহঃ) দেওবন্দ এবং নিজামুদ্দীন মার্কাজে গিয়ে মাওঃ সাদ সাহেবের সাথে ওনার বয়ানের তাহকিক করে বাংলাদেশে এসে মাওঃ সাদ সাহেবের বিরোধী হেফাজতের আলেমদের উদ্যেশ্য করে বললেন, আপনারা বিনা তাহক্বিকে মাওঃ সাদ সাহেবের উপর অনাস্থা হয়ে যতটা অপবাদ রটাচ্ছেন, আমরা তাহক্বিক করে এর থেকে বেশি আস্থাশীল হয়ে ওনার এতেয়াতে মেহনত করে যাবো ইনশাআল্লাহ। হেফাজতের নেতা মুফতি ইজহার সাহেবও (দাঃবাঃ) হেফাজতের তাবলীগের বিরোধীতা ও মাওঃ সাদ সাহেবের উপর বিভিন্ন তোহমত দেওয়ার কারনে হেফাজত ছেরে দিলেন এবং বারবার হেফাজতিদের হুশিয়ারী দিয়ে বললেন যে তোমরা একজন আল্লাহর ওলির সাথে এমন আচরন করিও না, তিনি হক্বের উপরই আছেন, তিনি কোন কিছুই মিথ্যা বলেননি, সব ওনার বিরুদ্ধে সরযন্ত্র করে অপবাদ রটানো হচ্ছে!।
অতঃপর এই দুই মুফতি সাহেব সহ আরো হক্বকানি আলেমদের মাওঃ সাদ সাহেবের উপর আস্থাশীল দেখে আমিও নিজামুদ্দীনের এতেয়াতে ফিরে আসলাম মুলধারাতে এবং হযরতজী সাদ সাহেবকেই দ্বীনের রাহবার মেনে নিয়ে মেহনত করতে থাকলাম।
(সংগ্রহ