20/10/2023
ইউরোপ সবার জন্য না-!
বাংলাদেশে যাদের বেতন ৫০ হাজার+ অথবা মধ্যপ্রাচ্যে যাদের মোটামুটি ভাল একটা বেতন আছে,তাদের যদি যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মানসিক এবং শারিরীক সামর্থ্য না থাকে তাহলে তাদের জন্য ইউরোপ না।
ফ্রান্স বা ইতালি এসে আপনার কাগজ হতে হতে, ২-৬ বছর লাগতে পারে, এমনো লোক আছে ৭/৮ বছরেও হয়নি। আমার দেখা আবার বিশেষ শ্রেণির মানুষ আছে যারা এই দেশে এসে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত হয়ে ১৫/১৬ বছর যাদের কাগজ হবার কোন নাম নেই।
এই সময়ের মধ্যে দেশে না যাওয়া এবং এখানে যে কোনো পরিস্তিতে মানিয়ে নেয়া অনেকটাই কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। অনেকেই আজ মানসিক রোগী। ইতালির/ফ্রান্সে বিভিন্ন রাস্তায় এবং পার্কে অসংখ্য মানুষ রাত্রী যাপন করে,গরমের সময় যেমনি হোক শীতকালে তাদের পরিস্থিতি অনেক খারাপ হয়ে যায়।
ফ্রান্স বা ইতালি এসে এজাইল মারবেন আর ফ্রি ফ্রি খাবেন সেই আশা ও করবেন না,কেইস পায় হাজারে ২ জন আর কেইস ফাইল এখন দ্রুত নিষ্পত্তি হয়ে আপনি অবৈধ হয়ে যাবেন দ্রুতই!
বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে একটা বদ্ধমূল ধারণা হচ্ছে ইউরোপ আসলেই সরকার টাকা দে,ঘর দে,কাগজ দে,চিকিৎসা দে,বাচ্চা হলে শুধু টাকা আর টাকা দে,ভাইরে ভাই এইগুলা স্বপ্নেই সম্ভব বাস্তবে না,আসেন,এসে দেখে যান কি দে আর কতদিন দে,পরে বুঝবেন!ইউরোপের আসল খেলাটা!
আজকে ফ্রান্স বা ইতালি এসে যাদের বাড়ি গাড়ি দেখছেন এগুলা অর্জনের পিছনে তাদের কত বছরের শ্রম ধৈর্য আত্মত্যাগ এবং নিরলস সাধনা ছিল সেটা নিজ দায়িত্বে জেনে নিবেন!
আপনার কাগজ না থাকার কারনে নিজ দেশী সহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা আপনার উপর ফায়দা তুলবে। সপ্তাহে ৭ দিনে ১৪ ঘন্টা কাজ করিয়ে স্যালারি দিবে ৬০০/৭০০ ইউরো।
ফ্রান্স/ইতালিতে একা একজন মানুষের মাসে ৩০০ থেকে ৪০০ ইউরো থাকা খাওয়ার খরচ লাগে এবং কাজ না থাকলেও আপনাকে সেটা বহন করতে হবে যা বাংলাদেশী টাকায় 40 থেকে 50 হাজার টাকার মতো। ইতালি/ফ্রান্সে মানুষের জীবন যাত্রা অনেক ব্যয়বহুল হওয়াতে কেউই আপনাকে ফ্রি ফ্রি তার কাছে রাখবে না বা খাওয়াবে না আর এটা সম্ভব ও না।তাই এখানে এসে পরিচিত কোনো আত্মীয়ের বাসায় থাকবেন সেই আশা ও করবেন না,এতে দুঃখিত হবার কিছুই নেই,এটা খুব স্বাভাবিক এবং এটাই বাস্তবতা।কারণ এখানেই প্রতি মিনিটে মিনিটে টাকার হিসাবে চলতে হয়,পানি কারেন্ট সব কিছুই যত ব্যবহার বেশি হবে ততই বিল বেশি আসবে,এই শহরে মানুষকে অনেক হিসাব করে চলতে হয়,কারণ 2500-3000 ইউরো নেট স্যালারী বাংলাদেশী টাকায় 3-4 লাখ টাকা দিয়ে ও একটা পরিবারের মানুষের মধ্যবিত্ত জীবন চলে,সেখানে অতিরিক্ত যে কেউই বোঝা হয়ে যায়।এটা বাংলাদেশ না যে এখানে কেউ আতিথিয়তায় আপনার মন রক্ষা করতে চাইবে এবং সেটাই বরং অনেক স্বাভাবিক!
তবে আপনারা যদি ইউরোপের কোনো দেশে ভালো কোনো জায়গায় ওয়ার্ক পার্মিট পান দয়াকরে পালিয়ে ফ্রান্স বা ইতালি আসবেন না। যেখানে আসবেন সেখানে কয়েকবছর থাকলে আপনার নিজের জন্যই ভালো হবে।
আইফেল টাওয়ারের সাথে একটা চকমকে সেলফি আর বাস্তবতা অনেক আলাদা।অনেকেই ইউরোপের রঙ্গিন ছবির প্রেমে মগ্ন,রঙ্গির ছবির পেছনের গল্পটা কেউ দেখেনা।
হয়তো স্যালারি কম হবে তবে মানসিক ভাবে ভালো থাকবেন। ২/৪ বছর পর ফ্রান্স ইতালি থেকে ভালো থাকবেন। (বাস্তব দেখা)।
এখন অনেকেই আছেন যারা আমার লিখার সাথে একমত হতে পারবেন না, আমি আমার একান্তই ব্যক্তিগত মতামত দিলাম। আশাকরি আমি কি বুঝাতে চেয়েছি বুঝতে পেরেছেন।
যাদের কোন পিছু টান নাই,বাবার প্রচুর টাকা,ইউরোপে স্থায়ী বসবাস করতে চান,তাদের জন্য বিষয় ভিন্ন,তারা বছর বসে খেলেও সমস্যা নাই,কারন তাদের প্রচুর টাকা আছে,তারা উন্নত জিবন চাই।
আবার যাদের ইউরোপের বিভিন্ন দেশে একান্ত ঘনিষ্ট পারিবারিক মানুষ আছে,তাকে সাহায্য করার মতো সুযোগ সুবিধা আছে,তাদের জন্য বাস্তবতা আবার ভিন্ন।
সংগ্রহীত