07/17/2024
সঠিক তারিখের দেড় মাস আগেই জন্মেছিলো শমী।
মনে পড়ে রাত তখন দেড়টা।
২৯ রিজে গাঙ্গুলী বাড়ির দোতলায় আমি একা।
শহীদুল্লাহ কায়সার বাসায় নেই।
সাংবাদিক মানুষ, প্রায় রাত করে বাড়ি ফিরত। আমারো অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল।
তবে বাইরে থাকলে বার বার ফোন করে আমার খবর নিত।
সেদিন কোনো ফোন নেই।
এদিকে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ছি।
শমী পৃথিবীতে আসার সংকেত দিচ্ছে, বুঝতে পারছিলাম।
লজ্জায় শাশুড়ি মাকেও খবর পাঠাচ্ছিনা।
রাগ হচ্ছিল শমীর বাবার উপর।
অগত্যা শাশুড়ি মাকে খবর দিলাম।
তিনি ছুটে এলেন।
বাড়ির সবাইকে ডেকে উঠালেন।
ঘড়িতে তখন প্রায় তিনটা বাজে।
শাশুড়ি অস্থির হয়ে জহির রায়হানকে বললেন,
চল বউমাকে নিয়ে হাসপাতালে।"
অগত্যা মেজদা জহির রায়হান আমাকে নিয়ে ছুটে এলো ঢাকা মেডিকেলে।
কিছুক্ষণ পর হন্তদন্ত হয়ে শহীদুল্লাহ ছুটে এলো।
অপরাধীর মত আমার মাথার কাছে এসে দাঁড়ালো।
অভিমানে আমার চোখে পানি এসে গিয়েছিল।
শমীর জন্মের খবর পেয়ে ওর বাবা একগোছা রজনীগন্ধা হাতে নিয়ে ঢুকতে ঢুকতে বললেন, আমার মেয়ে ফুলের মত সুন্দর হবে।
নয়মাস বয়সেই শমী হাঁটতে শুরু করে। আমরা বারান্দায় বসে চা খাচ্ছিলাম- আমি, শমীর বাবা, শাশুড়ি মা আর জহির রায়হান।
হঠাৎ দেখি শমী হাঁটতে শুরু করেছে এবং একদম নাচের ভঙ্গি তে।
মেজদা জহির রায়হান বললেন,
বড়দা দেখুন দেখুন, আপনার মেয়ের কেমন নাচের ভঙ্গিমা। কীভাবে তাকাচ্ছে দেখুন বড়দা।
আপনার মেয়ে বড় হলে নায়িকা হবে। আমার চিন্তা নেই, শমী বড় হলে আমার সিনেমার নায়িকা হবে।"
আজ ওরা কেউ নেই।"
কথাগুলো বলেছিলেন প্রয়াত
লেখিকা, শহীদ স্ত্রী, সংগঠক পান্না কায়সার।
তিনি চলে গেছেন অদেখা ভুবনে।
শমী কায়সার বলেন,
আমার মা অনেক ধৈর্য নিয়ে, যত্ন নিয়ে আমাদের বড় করেছেন।
আমার বাবার মৃত্যুর পর তিনি চাইলেই নতুন জীবন শুরু করতে পারতেন। কিন্তু তা তিনি করেননি।
আমাদের বড় করেছেন বাবার আদর্শ দিয়ে, নিজের আদর্শ দিয়ে।
সন্তানের যেকোনো রকমের প্রয়োজনে পাশে থেকেছেন আমার মা। আমার মায়ের এই ত্যাগের তুলনা নেই। "
পান্না কায়সারের আত্মার শান্তি কামনা করি।