21/07/2017
■■ জেনে নিন, কোলেস্টেরল কি? কি ভাবে কোলেস্টেরলের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করবেন? :::::: কোলেস্টেরল এক ধরনের চর্বি। এটি বেড়ে গেলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়। কোলেস্টেরল রক্তের এক রকম উপাদান, যা রক্তে মিশে থাকে এবং রক্তের সঙ্গে রক্তনালি দিয়ে সারা শরীরে চলাচল করে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ রক্ত থেকে কোলেস্টেরল সংগ্রহ করে বিভিন্ন রকম হরমোন ও প্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি করে থাকে।
★★ কোলেস্টেরল বেড়ে যায়, প্রথমত আমাদের খাদ্যাভ্যাসের কারণে। আর এমন জীবন যাপন যদি করেন, বেশি শুয়ে বসে থাকা। তারপর কিছু অভ্যাস আছে যেমন ধূমপান, মদ্যপান, জর্দা সেবন এসব কারণে হয়। আর কিছু রোগ রয়েছে এটার জন্য দায়ী ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ইত্যাদি। আর কিছু ওষুধ আছে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
★★কোলেস্টেরল জমা হয় রক্তনালিতে। জমা হতে হতে রক্তনালির স্বাভাবিক যে রক্তস্রোত তা বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। সুতরাং কোলেস্টেরল শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় চর্বিজাতীয় রক্তের উপকরণ, যা নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত প্রয়োজন, কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত হলে তা রক্তনালিতে জমে যায়। রক্তনালিতে জমে গেলে রক্তনালি সরু হয়ে যায় এবং রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে শরীরে অনেক রকম সমস্যা দেখা দেয়। হার্টের রক্তনালিতে জমলে বুকে ব্যথা, হার্ট অ্যাটাক; মস্তিষ্কের রক্তনালিতে জমলে স্ট্রোক, কিডনির রক্তনালিতে জমলে কিডনি ফেইলর এ রকম অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
★★ কোলেস্টেরলের আবার ভাগ আছে, যেমন- এলডিএল, এইচডিএল, ট্রাইগ্লিসারাইড। এলডিএল শরীরের জন্য সবচেয়ে খারাপ কোলেস্টেরল। এই কোলেস্টেরল রক্তনালিতে জমে বেশি। এইচডিএল শরীরের জন্য ভালো কোলেস্টেরল, রক্তনালিতে চর্বি জমতে বাধা দেয়, আর ট্রাইগ্লিসারাইড রক্তে বেশি থাকলে অগ্ন্যাশয়ে সমস্যা সৃষ্টি করে, আবার হার্টেও সমস্যা করতে পারে।
★★ অনেক ক্ষেত্রেই রক্তের বেশি কোলেস্টেরল পারিবারিকভাবে পেয়ে থাকে, কখনও কখনও জীবনযাপন পদ্ধতি এর জন্য দায়ী। রক্তের বিভিন্ন কোলেস্টেরলের নিরাপদ মাত্রা আছে।
★★ চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী, সর্বমোট কোলেস্টেরলের মাত্রা প্রতি ডেসিলিটারে ১৭০ মিলিগ্রামের নিচে, এলডিএল কোলেস্টেরল ডেসিলিটারে ১০০ মিলিগ্রামের নিচে, আর ট্রাইগ্লিসারাইড ডেসিলিটারে ১৫০ মিলিগ্রামের নিচে। ভালো কোলেস্টেরল এইচডিএলের মাত্রা ডেসিলিটারে ৪০ মিলিগ্রামের ওপরে রাখা ভালো।
★★ আমরা কীভাবে রক্তের চর্বির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি, তা জানা এবং নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা অত্যন্ত জরুরি।
●● প্রথমত, আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে;
●● দ্বিতীয়ত, ওষুধ সেবনের মাধ্যমে আমরা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।
■■ জীবনযাত্রার অভ্যাস পরিবর্তন
★★ খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন
◆◆ খাদ্যতালিকায় শাকসবজি, ফলের পরিমাণ বাড়াতে হবে। আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে। খোসাসহ সবজি খাওয়া ভালো।
◆◆ খাদ্যতালিকা থেকে প্রাণিজ চর্বি বাদ দিতে হবে, যেমন খাসির মাংস, মুরগির চামড়া, মেটে, মাথা, মাছের ডিম, ডিমের কুসুম, চিংড়ি মাছ প্রভৃতি।
◆◆ রান্নায় কম তেল দিতে হবে। তেলে ভাজা খাবার কম খেতে হবে। ভাপা সেদ্ধ গ্রিলড খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
◆◆ ঘি, মাখন, পনির, মেয়নেজ, ড্রেসিং খাওয়ার অভ্যাস বাদ দিতে হবে।
◆◆ রিফাইন্ড খাবার বাদ দিয়ে খাবার খেতে হবে (যেমন- জুসের বদলে ফল, ভুসিসহ লাল আটা)।
★★ শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে
◆◆ প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০ মিনিট করে সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন জোরে জোরে হাঁটতে হবে।
◆◆ বাড়ীর টুকটাক কাজ নিজের হাতে করার অভ্যাস করতে হবে।
◆◆ কাছাকাছি জায়গায় রিকশা না নিয়ে হেঁটে যাওয়ার অভ্যাস করা যেতে পারে।
◆◆ ধূমপান ছেড়ে দিতে হবে। তামাক বাদ দিতে হবে।
◆◆ ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
■■ কোলেস্টেরল কমায় এমন কয়েকটি খাবার।
★★রসুন: বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানে কার্যকর এই মসলা। গবেষণা মতে, রক্তনালীর গায়ে কোলেস্টেরেল জমা হওয়া রোধ করে। ফলে রক্ত জমাট বেঁধে রক্তনালী বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা কমে।
★★অ্যাভোকাডো: এর ‘বেটা-সিস্টোসেরল’ উপাদান খাবার থেকে শরীরে কোলেস্টেরল শোষণের পরিমাণ কমায়। এছাড়াও শরীরে ‘এইচডিএল’ নামে পরিচিত উপকারী কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতেও সাহায্য করে।
★★পালংশাক: বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানে কাজে লাগে। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ তার মধ্যে অন্যতম। দৈনিক খাদ্য তালিকায় এই শাক থাকলে কোলেস্টেরলের কারণে রক্তনালী বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি কমবে অনেকটাই।
★★ চা: এতে থাকা ‘ফ্লাভানয়েডস’ একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা, ‘এলডিএল’ বা ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রায় কমায়। রক্তনালীতে ‘প্লাক’ জমে তা বন্ধ করার পেছনে অনেকটাই দায়ী এই ‘এলডিএল’।
★★ডার্ক চকলেট: রয়েছে প্রচুর ‘ফ্লাভানয়েডস’। তাই চায়ের মতোই এটি লড়াই করে ‘এলডিএল’য়ের বিরুদ্ধে।
★★এক কাপ বীজজাতীয় খাবার: সব ধরনের বীজজাতীয় খাবার যেমন- কিডনি বিন, মটরদানা বা মটরশুঁটি কোলেস্টেরল কমাতে সহায়ক। কারণ এসবে রয়েছে কোলেস্টেরল কমাতে সহায়ক দ্রবণীয় আঁশ।
★★ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড: হৃদযন্ত্রের প্রাকৃতিক ওষুধ এই উপাদান। চর্বি যুক্ত মাছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের উল্লেখযোগ্য উৎস। তাই নিয়মিত এই মাছগুলো খেলে হৃদস্পন্দনের তাল ঠিক থাকবে, কোলেস্টেরল কমবে এবং ধমনীর প্রদাহ দূরে থাকবে।
★★সয়া: ভোজ্য চর্বি ও মাংসের স্বাস্থ্যকর বিকল্প হল সয়া। উদ্ভিজ্জ আমিষের এক চমৎকার উৎস সয়া, যাতে প্রকৃত মাংসে থাকা ‘স্যাচুরেইটেড ফ্যাট’ নেই। কোলেস্টেরল কমানোর পাশাপাশি কিছু নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও লড়াই করে এই শষ্য।
★★ওটস: বা যব’য়ের স্বাস্থ্যগুণের গোপন উৎস দ্রবণীয় আঁশ, যা কোলেস্টেরলকে শরীর থেকে ধুয়ে বের করে দেয়। গবেষণায় জানা গেছে, দ্রবণীয় আঁশনির্ভর খাদ্যাভ্যাস শরীরের মোট কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারে ১০ থেকে ১৫ একক পর্যন্ত।
★★বাদাম: হৃদরোগের ঝুঁকি ৩৯ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে বাদাম খাওয়ার অভ্যাস। চিনাবাদাম, আখরোট ও কাজুবাদাম বেশি উপকারী। বাদামে চর্বি বেশি থাকলেও তা ‘মনোস্যাচুরেইটেড’ ও ‘পলিম্যাচুরেইটেড’ ধরনের, যা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। এছাড়াও কমায় ‘সিআরপি’ এবং ‘ফাইব্রিনোজেন’য়ের মাত্রা, দুটাই প্রদাহ সৃষ্টিকারী। তাই সপ্তাহে কমপক্ষে পাঁচবার এক আউন্স পরিমাণ বাদাম খাওয়ার অভ্যাস গড়তে হবে।
★★ জীবনযাত্রার অভ্যাস পরিবর্তনের দু-তিন মাস পরও যদি রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে না আসে, তাহলে ওষুধ খেয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, যাদের পারিবারিকভাবে রক্তে অধিক কোলেস্টেরলের প্রবণতা আছে, তাদের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা অন্যদের চেয়ে অনেক কঠিন। তাই তাদের অনেক বেশি চেষ্টা করতে হবে। ওষুধ খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবনযাত্রার অভ্যাসগুলোকেও মানতে হবে। রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হৃদরোগ, ব্রেইন স্ট্রোক ও কিডনি ফেইলরের ঝুঁকি এড়াতে পারেন। মনে রাখতে হবে, প্রতিরোধ সব সময়ই প্রতিকারের চেয়ে ভালো।