18/07/2021
Assalamualaikum
বাংলাদেশের মানুষ আরাফার রোজা কোন্ দিন রাখবে? (একটি ভারসাম্যপূর্ণ আলোচনা)
▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬
প্রথমেই বলে নিই: বর্তমানে আরবি চন্দ্রবছরের জিলহজ মাস চলছে। এই মাসের ৯ তারিখে হাজিগণ আরাফার মাঠে অবস্থান করেন। আরাফার দিনটিই হজের দিন। আর এর পরের দিন অর্থাৎ, জিলহজের ১০ তারিখ হলো ঈদের দিন।
❖ যেদিন রাখতে হবে আরাফার রোজা:
আরাফার রোজা কোন্ দিন রাখতে হবে, তা নিয়ে আলিমগণের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে।
❑ প্রথম মত:
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আরাফার দিনের রোজার বিষয়ে আমি আল্লাহর নিকট আশা করি যে, তিনি এর দ্বারা বিগত বছর ও আগামী এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন।’’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ১১৬২]
উপরের হাদিসে খেয়াল করুন, ‘আরাফার দিনের রোজা’র কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ, যেদিন আরাফার মাঠে হাজিগণ অবস্থান করেন।
আমরা জানি, আগামী ১৯ জুলাই, হাজিগণ আরাফার মাঠে অবস্থান করবেন। তাই, বাংলাদেশের অধিবাসীরাও ১৮ জুলাই রাতে সাহরি খেয়ে ১৯ জুলাই, সোমবার আরাফার রোজা রাখবে। সৌদি আরবের সাবেক প্রধান মুফতি, গত শতাব্দীর শীর্ষ আলিম শায়খ আবদুল আযিয ইবনু বায (রাহ.)-সহ অনেক আলিমের মত এটি। সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া বোর্ড লাজনা দায়িমা এবং মিসরের ফতোয়া বোর্ড দারুল ইফতার মতামতও এমন। [শায়খ আমিন ইবনু আবদিল্লাহর প্রবন্ধ (আল-আলুকাহ সাইট থেকে)]
❑ দ্বিতীয় মত:
আমরা জানি, জিলহজের ৯ তারিখে হাজিগণ আরাফার মাঠে অবস্থান করেন। আলিমগণের অনেকেই বলেছেন, হাদিসে বর্ণিত ‘আরাফার দিন’ দ্বারা মূলত জিলহজের ৯ তারিখ বুঝানো হয়েছে। তাই, নিজ নিজ দেশের চাঁদের হিসাব অনুযায়ী জিলহজের ৯ তারিখে আরাফার রোজা রাখতে হবে। মাওলানা যাকারিয়া আব্দুল্লাহ এ ব্যাপারে মাসিক আলকাউসারে সুন্দর আলোচনা করেছেন। গত শতাব্দীর শীর্ষ আলিম শায়খ মুহাম্মাদ বিন সলিহ আল উসায়মিন (রাহ.) ও ইবনু জিবরিন (রাহ.) এই মত দিয়েছেন। হানাফি মাযহাবের সিদ্ধান্ত এটিই। এই মতানুসারে, বাংলাদেশের অধিবাসীরা আগামী ১৯ জুলাই রাতে সাহরি খেয়ে ২০ জুলাই, রোজ মঙ্গলবার আরাফার রোজা রাখবে।
❑ সমন্বয় সাধন ও সমাধান:
যেহেতু বিষয়টি ইখতিলাফি (মতভেদপূর্ণ), সেহেতু আমরা সতর্কতা হিসেবে দুই দিনই রোজা রাখতে পারি। অর্থাৎ, সৌদির হিসাবে ৯ তারিখে (যেদিন হাজিগণ আরাফায় থাকবেন) এবং আমাদের দেশের হিসাবে ৯ তারিখে (অর্থাৎ, আরাফার দিনের পরের দিন)। তাহলে নিশ্চিতভাবে আমাদের আরাফার রোজা আদায় হয়ে যাবে; কোনো সন্দেহ থাকবে না। সেই হিসেবে, আগামী ১৯ ও ২০ জুলাই, রোজ সোম ও মঙ্গলবার দুই দিন আমরা রোজা রাখবো। তবে, দুটো রোজাই আরাফার নিয়তে রাখা যাবে না। যেকোনো একটি আরাফার নিয়তে রাখবেন আর অপরটি সাধারণ নফলের নিয়তে। হ্যাঁ, দুশ্চিন্তার কিছু নেই; আরাফার দিনে যদি কেউ সাধারণ নফলের নিয়তেও রোজা রাখে, তবে সেটি আরাফার রোজা হিসেবেই পরিগণিত হবে। তাই, আমাদের পরামর্শ হলো: ১৯ তারিখে আরাফার নিয়তে রোজা রাখবেন, আর ২০ তারিখে সাধারণ নফলের নিয়তে রাখবেন (কেউ দ্বিতীয় মতটি মানতে চাইলে, ১৯ তারিখ সাধারণ নফলের নিয়তে রাখবেন আর ২০ তারিখ আরাফার নিয়তে রাখবেন)। ইনশাআল্লাহ, নিশ্চিতভাবেই আরাফার রোজা হয়ে যাবে। নিয়ত মুখে বলতে হবে না; অন্তরের ইচ্ছাই যথেষ্ট।
পূর্ববর্তী নেককার ব্যক্তিগণ জিলহজের প্রথম ৯ দিনই রোজা রাখতেন। সুতরাং আরাফার রোজার জন্য সতর্কতা হিসেবে একদিন বেশি রোজা রাখলেও ক্ষতি নেই; বরং একটি নফল রোজা অতিরিক্ত রাখা হবে। সম্ভব হলে তো জিলহজের প্রথম ৯ দিনই রোজা রাখা ভালো।
তাছাড়া সাধারণভাবেই জিলহজের প্রথম দশ দিনের আমল অত্যন্ত মর্যাদার। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলার নিকট জিলহজের (প্রথম) দশ দিনের আমলের চেয়ে মহান এবং প্রিয় অন্য কোনো দিনের আমল নেই।’’ [আহমাদ, আল-মুসনাদ: ৫৪৪৬; হাদিসটির সনদ সহিহ]
নফল রোজা তো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল। তাই, এই দিনগুলোতে বেশি বেশি নফল রোজা রাখা উত্তম।
❖ আরাফার দিনে হাজি সাহেবরা রোজা রাখবেন না; বরং অন্যরাই শুধু রাখবেন।
উম্মুল ফাদ্বল (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আরাফার দিন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোজা রেখেছেন কি না, তা নিয়ে লোকজন সন্দেহে পতিত হলে আমি রাসুলের নিকট পানীয় প্রেরণ করলাম। নবিজি তখন উটের উপর ছিলেন। আর তিনি তা পান করলেন। (ফলে সবাই নিশ্চিত হলো যে, তিনি রোজা রাখেননি। তিনি তখন হজ পালনরত ছিলেন) [মুসলিম, আস-সহিহ: ২৬৫১