30/08/2024
'কল-রেডী' শুধু একটি নাম নয়, বাংলাদেশ ইতিহাসের সাক্ষী মিডিয়ার ভাষ্যমতে এই কথাটা দেশের প্রায় সকলে বহুবার শুনেছেন কিংবা পত্রিকায় পড়েছেন। ১৯৪৮ সালে জন্ম নেওয়া প্রতিষ্ঠানটি অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ৭৮ বছর পাড়ি দিয়েছে। ১৯৪৮ থেকে শুরু করে ৭১ এর ৭ মার্চ পর্যন্ত সকল আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে কল-রেডী৷ সকল ক্ষেত্রেই কল-রেডীর ভূমিকা ছিল অপরিসীম, মাওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ থেকে শুরু করে শেখ মুজিবুর রহমান সকলের কর্মসূচিতে টাকার জন্য নয় বরং দেশের জন্য বিনা পয়সাতেও মাইক সরবরাহ করেছে কল-রেডী৷
স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখা প্রায় সকল জাতীয় নেতা কল-রেডীর মাইকে ভাষণ দিয়েছেন৷ এসব কোনো বানোয়াট কথা নয়৷ এসব ইতিহাস যে কেউ উইকিপিডিয়া বা গুগলে সার্চ দিলেও জানতে পারবেন৷ ৪৮ সালে জন্ম নেয়া প্রতিষ্ঠানটি আন্দোলন সংগ্রামের পাশাপাশি চলতে চলতে উপস্থিত হয় ৭১ এর ৭ই মার্চ৷ যে ৭ মার্চ রেসকার্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমান সামগ্র জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের ডাক দেন৷ ১৯৪৮ এর পরে এবং ভাষা আন্দোলনের পরে আরো দুটি প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয় একটি উর্দু রোডে তাহের মাইক সার্ভিস অপরটি হলো কাঁটাবনে হাবিব মাইক সার্ভিস৷ দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিক ছিলেন মুসলিম৷ অথচ মার্চ মাসে দেশের চরম এক মুহূর্তে দুটি প্রতিষ্ঠানই বন্ধ থাকে, পাওয়া যায়নি কোনো মালিককে৷ তখন ডাক পড়ে কল-রেডীর প্রতিষ্ঠাতা দুই ভাইয়ের৷ তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয় ৭ মার্চের জনসভাটি যেকোনোভাবে হোক সম্পন্ন করার৷ জনসভার পূর্বে তৎকালীন পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হেলিকপ্টার মাথার উপর দিয়ে ঘুরছে আর্মির গাড়ি টহল দিচ্ছে এর মধ্যে মাইক ফিটিং করে ৭ তারিখে জনসভার সফল করতে হবে এই দায়িত্বভার দুই ভাইয়ের কাধে তাও এমন একটা সময় যখন দেশের সব হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক ভারত পালাচ্ছিল৷ এসব কিছু উপেক্ষা করে তখন কল-রেডীর দুই ভাই স্টাফদের নিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে মাইক বেধে ঢেকে রাখত৷ এভাবেই পাকহানাদার বাহিনীর চক্ষু আড়াল করে কাজ সম্পন্ন করা হয়। ১০০% মৃত্যুর ঝুঁকি জেনেও কল-রেডীর দুই প্রতিষ্ঠাতা এবং স্টাফরা স্বাধীন একটি দেশের স্বপ্নে বিভোর হয়ে কাজ শুরু করে এবং সফলভাবে ৭ই মার্চের জনসভা সমাপ্ত করে৷ কল-রেডীর মাইক দিয়ে প্রচার হওয়া ভাষণটি রেডিওর মাধ্যমে শুনেছিলেন সমগ্র বাঙালি জাতি ও বিদেশি জনগণ৷ সরাসরি শুনেছেন ময়দানে উপস্থিত বাঙালি তরুণ নারী বৃদ্ধ সকলেই৷ এই ভাষণের মাধ্যমে সমগ্র জাতি একটি দিক নির্দেশনা পায়, যার যা কিছু আছে তা নিয়েই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং নয় মাস যুদ্ধ করে লাখো মানুষের রক্তের বিনিময় আসে স্বাধীনতা৷ স্বপ্ন বাস্তব হয় বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়৷ ৭ই মার্চের কাজ করতে গিয়ে কল-রেডীর মালিক একটুর জন্য প্রাণে বেঁচে যান৷ ঐতিহাসিক এই কাজটি করার জন্য একটি পয়সাও নেয়নি প্রতিষ্ঠানটি, নিজের পকেটের টাকা খরচ করেই অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করেছিল যার প্রতিদানস্বরূপ প্রতিষ্ঠানটি পুরস্কার পেয়েছে দোকানের মালামাল লুট ভাঙচুর এবং প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ। পুরো মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়টায় প্রতিষ্ঠানটির মালিকরা তাদের পরিবার পরিজনসহ পার করেছে মানবেতর জীবন। শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে এত বড় অবদানের জন্য কোন রকমের স্বীকৃতি প্রদান করেন নাই অথচ যারা মুক্তিযোদ্ধাদের ভাত রান্না করে খাইয়েছে তাদেরকে পর্যন্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মাননা দিয়েছে, আমাদের প্রশ্ন কী ছিল কল-রেডীর অপরাধ? কল-রেডী কী রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পাওয়ার যোগ্য ছিল না? ৭৫ এর পরবর্তীতে সব দলের ছোটখাটো কাজ করতে থাকে কল-রেডী। শেখ হাসিনা দেশে ফিরলে তার সভা-সমাবেশগুলোতে মাইক সরবরাহ করতো এই প্রতিষ্ঠান। যেহেতু কল-রেডী একটি পরিচিত নাম সে হিসেবে আওয়ামী লীগ সহ অন্যান্য যে কোন অনুষ্ঠানের কাজ করতো কল-রেডী। তবে বলতে দ্বিধা নেই যে আওয়ামী লীগের জনসভাগুলোতেই অধিকাংশ কাজ করেছে কল-রেডী। তাই বলে কল-রেডী কোন রাজনৈতিক সংগঠন নয় কিংবা কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত এমন প্রমাণ কেউ কখনও দিতে পারবে না। কল-রেডী একটি প্রতিষ্ঠান। যারাই ডাকুক আমরা তাদের কাজ করার জন্যই প্রস্তুত। পৈতৃক ব্যবসারসূত্রে আমাদের জীবনধারণের অবলম্বন এই প্রতিষ্ঠান তাই কোনো ব্যক্তি, দল, সংগঠন নয় যে কারো কাজ করতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা গর্বের সাথে বলতে পারি কল-রেডীর প্রতিষ্ঠাতা দুই ভাই বা এই প্রতিষ্ঠানের বর্তমান দায়িত্বে থাকা কেউই কখনই কারো কাছে তদবির মারফত কাজ চায়নি, কারো কাছে কাজের জন্য ধরনা দেয়নি। সকলে অবগত আছেন কল-রেডী আওয়ামী লীগে বা শেখ হাসিনার সমাবেশগুলোতে বেশি কাজ করেছে, এটা সত্যি তবে এর পেছনের ইতিহাস কেউ কখনও ভাবেনি বা দেশের আর দশটা মানুষের মানুষের মতো সত্যিটা জানাতে আমরাও ছিলাম অপারগ। আমরা আওয়ামী লীগের কাজ করেছি কিন্তু পূর্ণাঙ্গ বিল তো দূরের কথা একটি অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয় সেটাও তাদের কাছ থেকে আদায় করতে পারিনি এবং সর্বশেষ অনেক টাকা বকেয়া পরিশোধ না করেই দলীয় প্রধান থেকে শুরু করে কর্তাব্যক্তিরা আজ দেশ ত্যাগ করেছেন। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে যে ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃত সেই ভাষণে ব্যবহৃত মাইক্রোফোনগুলো রাষ্ট্রীয়ভাবে সংরক্ষণের জন্য নানা ভাবে বিভিন্ন মিডিয়া দাবি জানালেও আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনা একটিবারের জন্যেও তা আমলে নেয়নি আর কল-রেডীর স্বীকৃতি সে তো কাল্পনিক স্বপ্ন ছাড়া কিছুই নয়। লজ্জা হতো যখন দেখতাম আমাদের দেশে রাজাকাররা পদক পাচ্ছে কিন্তু ঐতিহাসিক একটি প্রতিষ্ঠান ন্যুনতম সম্মাননা পর্যন্ত পায় না। দেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতায় প্রত্যেকটি মানুষ তাদের জমে থাকা কথাগুলো আজ বিনাসংকোচে বলতে পারছে তাই আমাদের ভেতরের কথাগুলো সকলকে আজ প্রকাশ করলাম। আমরা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, কল-রেডী সবার কাজ করতে আগ্রহী। শুধুমাত্র রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কাজ ছাড়া যে কোনো সংগঠন, প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিবিশেষ যে কেউ তাদের অনুষ্ঠানের জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন অথবা সরাসরি আমাদের প্রতিষ্ঠানে আসুন। যেকোনো ধরনের কাজ হোক কল রেডি এখনো সর্বসেরা শব্দের জগতে এক বিশ্বস্ত নাম